ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা – ডিজিটাল বাংলাদেশ

আজকে আমরা জানবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা। আমাদের দেশ ডিজিটাল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন। তার ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা জানবো।

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকা: বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ঘুম থেকে উঠার পরে আমাদের জীবন শুরু হয় তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে। বলতে গেলে, আমরা যেমন জীবনে চলার জন্য শক্তি চাই, তেমনি আমাদের জীবন কে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি।  অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির ছাড়া বর্তমান জীবনকে আমরা ভাবতে পারি না। বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলেই আমরা বলি আমাদের দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে। অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ। অনেকেই আবার বলেন তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে জাদুর কাঠির ছোঁয়া।

ডিজিটাল শব্দের অর্থ: 

ডিজিটাল বলতে মূলত আধুনিকায়ন বোঝায়। তবে ডিজিটাল শব্দটি সবচেয়ে বেশি যে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়ন হচ্ছে ডিজিটাল। যেমন, আমরা আমাদের দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলি। বর্তমান বিশ্বে তথ্য বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি যোগাযোগ হয়ে পড়েছে খুবই সহজ। যেমন ঘরে বসে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি। সুতরাং ডিজিটাল শব্দটি এখন অবশ্যই মানানসই। আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ কি ?

ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে বোঝায়, আমাদের দেশ তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, স্কুল কলেজ সব জায়গায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার এবং এ সকল ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা, অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানো হবে। দেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল কাজ সম্পন্ন করবে। সময়ের সঠিক ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং কাজ গতিশীল করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হবে। 

অধ্যবসায় রচনা – সম্পূর্ণ অধ্যাবসায় রচনা যা লিখলে সর্বোচ্চ নাম্বার পাবেন

ডিজিটাল বাংলাদেশ এর উদ্দেশ্য 

ডিজিটাল এর মাধ্যমে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে দেশ যোগাযোগ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সকল যোগাযোগ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা সম্ভব হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ ডিজিটাল হলে, দেশের উন্নতি সাধিত হবে। দেশের উন্নতি সাধন করা ডিজিটাল বাংলাদেশ এর উদ্দেশ্য। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্ব শর্ত

ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি যতটা সহজ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা ঠিক ততটা কঠিন। কিন্তু আশার দিক হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে, যেগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে নজর দিতে হবে। আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্ব শর্ত হিসেবে সে সকল বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। 

বিদ্যুৎ উৎপাদন:

বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় 2017 থেকে 18 অর্থবছরে সর্বোচ্চ10084 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে। যা আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় কম। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটানোর জন্য অবশ্যই বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান শহর থেকে গ্রামে পৌঁছাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ। যেন গ্রামের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ ভোগ করতে পারে। এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। 

শিক্ষা: 

বাংলাদেশের শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। অর্থাৎ নিরক্ষরতার হার কমিয়ে আনতে হবে। কারণ শিক্ষিত মানুষ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। প্রযুক্তি ব্যবহারে আপনাকে শিক্ষিত হতে হবে। এজন্য শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। তা না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ কেবল একটি স্বপ্নের নাম হয়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে রূপান্তরিত হবে না। 

ইন্টারনেট সম্প্রসারণ 

ইন্টারনেট সম্প্রসারণ এর অর্থ হচ্ছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ ইন্টারনেট এর মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থ হচ্ছে, আমরা আমাদের কাজকর্ম অনলাইন ভিত্তিক করে ফেলব। এজন্য প্রয়োজন ইন্টারনেটের ব্যবহার। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি ইন্টারনেট এর ব্যবহার না থাকে, তাহলে বাংলাদেশে ডিজিটাল হতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশ শুধুমাত্র শহর এলাকা নিয়ে গঠিত নয়। বাংলাদেশ এর অর্থ শহর-গ্রাম সকল কিছু নিয়ে। 

নেটওয়ার্ক এর অবকাঠামো উন্নয়ন 

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মোবাইল ডাটা এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক অত্যন্ত দুর্বল। এর কারনে তারা নেটওয়ার্ক এর আওতাধীন হতে পারছে না। অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে না। এর ফলে দেশের ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। এজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেন নেটওয়ার্কের সঠিক অবকাঠামো নিশ্চিত হয় এর ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ নেটওয়ার্কের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা জানার পাশাপাশি আরও রচনা জানুন:

শিক্ষা সফর রচনা

Political candidate statement sample | city council candidate statement

তরুণ প্রজন্ম: শিক্ষিত বেকার, সম্ভাবনা এবং সমস্যা

ইংরেজি শিক্ষার সম্প্রসারণ 

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রসর হতে হবে।  অর্থাৎ আমাদের দেশে বসেই বাইরের রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। বাইরের দেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য আমাদের ইংরেজি শিক্ষা প্রয়োজন। যত বেশি মানুষ ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, ততো বেশি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। অনেকেই আছে যারা ইংরেজি শিক্ষার অভাবের কারণে তথ্য প্রযুক্তিকে সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির দিকনির্দেশনা জানার জন্য ও ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ 

১. প্রথমেই যেকোনো বিষয়ে পূর্ণ রূপ দিতে হলে তার একটি নকশা প্রয়োজন। নকশা টি অবশ্যই বিজ্ঞান সম্মত হতে হবে। অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত নকশা প্রয়োজন। সেই নকশা অনুযায়ী প্লানগুলো বাস্তবে রূপ দিতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। 

২. গ্রাম এবং শহরের মাঝে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। 

৩. জনগণ যেন পরিবর্তনশীল মানসিকতার পরিচয় দিতে পারে, এজন্য গণমাধ্যম এবং সংবাদপত্রের ভূমিকা রাখতে হবে। 

৪. ইন্টারনেটের অবকাঠামো উন্নয়ন করার জন্য বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। 

৫. সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার জোরদার করতে হবে। 

৬. ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করতে হবে। যেন সকলের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায়। 

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন নোটিশ এবং অন্যান্য কার্যক্রম অনলাইনে করতে হবে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে অগ্রসর 

  • মোবাইল মানি অর্ডার: মুহুর্তের মধ্যে টাকা পৌঁছানোর জন্য বর্তমানে মোবাইলে মানি অর্ডার সার্ভিস ডাক বিভাগের অধীনে চালু রয়েছে। 
  • ই-পাসপোর্ট: বর্তমানে দেশে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে। 
  • কেনাকাটা, অনলাইন পণ্য ক্রয় ব্যবস্থা, বিভিন্ন খাবার অর্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে অনলাইন বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে যা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। 
  • অনলাইন জিডি: বর্তমানে জিডি করার জন্য অনলাইনে ঘরে বসে করা সম্ভব। কিন্তু পূর্বে এর জন্য থানায় সময় নিয়ে করতে হতো। 
  • অনলাইন টেন্ডার: ভূমি প্রশাসনে বর্তমানে টেন্ডার সমূহ অনলাইনে সম্পাদিত হয়।
  • মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট: মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট 2010 সালে পহেলা মে ইস্যু করা হয়। 
  • প্রাথমিক ওয়েবসাইট: প্রাথমিক পাঠ্যবইগুলোর ই ভার্শন, ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। 
  • দেশের 64 জেলায় ওয়েব পোর্টাল চালু রয়েছে। 
  • মোবাইলে কৃষি সেবা: বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি, মোবাইল এর মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 
  • টেলিমেডিসিন সেবা: বাংলাদেশের অগ্রগতির ফলে বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে মেডিকেল বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা হয়। ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ভর্তি তথ্য, আবেদন, পরীক্ষার ফলাফল এই বিষয়গুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানা যায়। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষার বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল গুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা সম্ভব হয়। 
  • হাইটেক পার্ক: বর্তমানে দেশে হাইটেক পার্ক ও কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশের ডিজিটাল খাত এর অভাবনীয় উন্নতি সাধন হবে। 
  • সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন: বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবল এর স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ সাধিত হয়েছে। দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য করে দিয়েছে। 

উপসংহার: 

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ডিজিটাইজেশন হতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ তখনই গড়া সম্ভব হবে যখন আমরা সবাই তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা বাস্তবায়ন সহজ নয়। তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি, আমরা একদিন ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবো। 

আশা করি আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা বুঝতে পেরেছেন। আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে আরো রচনা পাবেন। এছাড়া বিভিন্ন বই পিডিএফ আকারে পাবেন। আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে আপনারা বিভিন্ন কোর্স পাবেন। ইউটিউব: Learning View Bd

3 thoughts on “ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা – ডিজিটাল বাংলাদেশ”

Leave a Comment