প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ- বাংলা দ্বিতীয় পত্র

প্রতিবেদন পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় প্রতিবেদনের জন্য 10 নম্বর বরাদ্দ থাকে। তাই প্রতিবেদন লেখার জন্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা অনেকেই নিয়মকানুন ছাড়া প্রতিবেদন লেখার কারণে আমাদের নাম্বারটা কমে যায়। তাই আমাদের প্রয়োজন প্রতিবেদন লেখার সঠিক কাঠামো অনুসরণ করা। তাই প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সহ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন, সংবাদ প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আজকের এই লেখা।

প্রতিবেদন কি?

প্রতিবেদন শব্দ এর অর্থ হচ্ছে সমাচার, বিবৃতি বা বিবরণী। নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধানের পর সুসংগঠিত করে বিবরণী আকারে কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রতিবেদন। আমরা যে বিষয় উপস্থাপন করতে চাই তার যথাযথ অনুসন্ধান প্রয়োজন।

প্রতিবেদন লেখার প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। কারণ প্রতিবেদন লেখার নির্দিষ্ট কোন শ্রেণীবিভাগ নেই। অষ্টম শ্রেণি, নবম দশম শ্রেণি কিংবা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য কিছু ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন রয়েছে। যেমন নবম-দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মূলত তিন ধরনের প্রতিবেদন লিখতে হয়। তা হচ্ছে সংবাদ প্রতিবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন ও সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন। আজকে আমরা প্রতিবেদন লেখার এমন কিছু নিয়ম জানব যা সকল ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

  • প্রতিবেদনটি টাইটেল হবে অনেকটা এমন: নিজের এলাকার সামাজিক সমস্যা মূলক কোন বিষয় নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশের উপযোগী একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে
  • এক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবো তা হচ্ছে প্রতিবেদন লেখার যথাযথ অনুসরণ করতে হবে।
  • বিষয়টি সামাজিক সমস্যামূলক ও নিজের এলাকার হতে হবে
  • প্রাসঙ্গিক তথ্য উপাত্ত যুক্ত করতে পারা
  • বানান ঠিক রাখতে হবে
  • ভাষা ও উপস্থাপনা ভঙ্গীর আকর্ষণীয় হতে হবে

সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নমুনা

1. মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি চাই প্রতিবেদন

তারিখঃ ০২/০৪/২০১৮

সম্পাদক

প্রথম আলো

সিএ ভবন, ১০০কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,

কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বিষয়ঃ সংযুক্ত পত্রটি প্রকাশের জন্য আবেদন।

জনাব,

আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকার ‘চিঠিপত্র’/’মতামত’ বিভাগে সংযুক্ত পত্রটি প্রকাশ করলে কৃতজ্ঞ থাকব।

বিনীত

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী

উত্তরা, ঢাকা

মশার উপদ্রবে অতিষ্ট এলাকাবাসী

মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি চাই

ঢাকার অন্তর্ভুক্ত উত্তরা আবাসিক এলাকা একটি জনবহুল এলাকা। এখানে হাজারো মানুষের বসবাস। প্রতিদিন অজস্র মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে কাজের জন্য। আবার ঘরে ফিরে আসছে। কিন্তু তাদের এই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে ডেঙ্গু নামে এক ভয়াবহ রোগ। উত্তরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে অপরিচ্ছন্ন এবং অব্যবস্থাপনা যুক্ত বিভিন্ন ড্রেন ও বিভিন্ন স্থান। যেখান থেকে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য ডেঙ্গু মশা। এমন অবস্থায় এলাকায় ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বেড়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা দিনের বেলায় মশারি ছাড়া পড়ালেখা করতে ভয় পায়। তাদের পড়ালেখায় ঠিকমত মন বসছে না। কারণ তারা আতঙ্কে রয়েছে। অনেকেই তাদের কর্মস্থলে ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। মশার কামড়ে শুধুমাত্র ডেঙ্গু হয় এমনটা নয়। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সহ আরো অনেক জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তবে এবছরের ডেঙ্গু মশার ভয়াবহতা হচ্ছে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করছে। কিন্তু খুবই হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে তেমন কোনো সচেতনতা মূলক কর্মকান্ড দেখা যায় না। যতদূর দেখা যায় তা হচ্ছে বিকালে কিছুটা স্প্রে করা হয়। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে স্প্রে এর মধ্যে দিয়ে মশা উড়ে যায়। অর্থাৎ স্প্রে মশার জন্য আরো মজাদার হয়েছে। শুধুমাত্র কেরোসিন স্প্রে করলে মশা উপদ্রব কমানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন সঠিক স্প্রে দেওয়া। এক্ষেত্রে দুর্নীতিকে না বলতে হবে।

আমরা শুধু আমাদের এলাকার সমস্যা সমাধান করার কথা বলছি না। আমরা আমাদের এলাকার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশ থেকে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব কমানোর আহ্বান জানাচ্ছি। অবশ্যই সরকারের যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে তেমনি আমাদের রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এজন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

আমরা যেভাবে ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধ করতে পারি:

  • সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে স্প্রে করা প্রয়োজন। কারণ ডেঙ্গু মশা বেশিরভাগ সময় সকালে ও বিকালে কামড়ায়।
  • জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এজন্য সরকার বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ইত্যাদির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করতে পারেন।
  • বর্তমানে বেশি মানুষ অনলাইনে সময় ব্যায় করে। তাই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
  • আমাদের বাসার চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। কোথাও পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। ফুলের টব, বিভিন্ন পাত্র ইত্যাদিতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
  • যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।
  • শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে না ভেবে সকলের জন্য ভাবতে হবে। অর্থাৎ নিজের বাড়ির আশেপাশে যেমন পরিষ্কার রাখতে হবে তেমনি অন্যদেরও পরিষ্কার করার কথা বলতে হবে।
  • সর্বোপরি সরকারের তদারকি খুবই প্রয়োজন। কারণ সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধিরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে জনগণ ডেঙ্গু প্রতিরোধে উৎসাহ পাবে।

উপর্যুক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করলে ডেঙ্গু তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী

উত্তরা, ঢাকা

You all Bangla essay is here.

Leave a Comment