প্রকৃতি ও প্রত্যয়: বাংলা ব্যাকরণ এ প্রকৃতি এবং প্রত্যয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্যাংক জব, বিসিএস পরীক্ষা সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে প্রকৃতি এবং প্রত্যয় থেকে একটি প্রশ্ন থাকে। আবার অনেকেই প্রকৃতি, প্রত্যয় ভালো পারে না। অনেকেই প্রশ্ন করেন প্রকৃতি, প্রত্যয় শেখার সহজ উপায় কি। তাই আজ আমরা প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করার জন্য কিছু শর্ট টেকনিক বা সূত্র আলোচনা করব। অর্থাৎ প্রকৃতি ও প্রত্যয় মনে রাখার কৌশল সম্পর্কে জানব। যার মাধ্যমে খুব সহজে আপনারা প্রকৃতি, প্রত্যয় নির্ণয় করতে পারবেন।
শর্ট টেকনিক বা সূত্র জানার আগে আমাদের প্রকৃতি এবং প্রত্যয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা প্রয়োজন। তাই প্রথমে আমরা প্রকৃতি এবং প্রত্যয় সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে আসি, প্রকৃতি কাকে বলে ও প্রত্যয় কাকে বলে?
প্রকৃতি কাকে বলে?
যার বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, এমন ধরনের মৌলিক শব্দ কে বলা হয় প্রকৃতি। অর্থাৎ সহজভাবে বলতে গেলে, শব্দ বা ধাতুর মূল অংশকে বলা হয় প্রকৃতি। যেমন- মা,য়া ।
প্রকৃতির প্রকারভেদ:
প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা,
- নাম প্রকৃতি এবং
- ক্রিয়া প্রকৃতি।
নাম প্রকৃতি কাকে বলে?
যে প্রকৃতি এর মাধ্যমে কোন জাতি, দ্রব্য,গুন বা অন্য পদার্থ দ্যেতিত হয়, তাকে নাম প্রকৃতি বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে শব্দের মূল অংশই নাম প্রকৃতি।
নাম প্রকৃতি লেখার জন্য কোন কিছু যুক্ত না করে শব্দরূপে প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু বাক্যে প্রয়োগ করতে হলে বিভক্তি চিহ্ন যোগ করা হয়।
যেমন: ঢাকা, ঢাকার পথে চলমান ইত্যাদি।
ক্রিয়া প্রকৃতি কাকে বলে?
ক্রিয়ারে মূল কে ক্রিয়া প্রকৃতি বলা হয়। ক্রিয়া এর আরেক নাম ধাতু। ধাতু প্রকৃতি নিজে শব্দ রূপে ব্যবহৃত হয় না। এর সাথে প্রত্যয় এবং বিভক্তি যোগ করে শব্দ সৃষ্টি করতে হয়। এই প্রত্যয় এবং বিভক্তি সাধারণত দৃশ্যমান থাকে। কিন্তু কখনো কখনো বাক্যে উহ্য থাকতে পারে।
যেমন: কর, বাড়ির কাজ কর।
এখানে ছোট একটি কৌশল বলে রাখি। তা হচ্ছে, যে শব্দ দ্বারা কাজ বোঝায় তা হলো ক্রিয়া প্রকৃতি এবং যে সকল শব্দ দ্বারা কাজ বোঝায় না তাহলো নাম প্রকৃতি।
যেমন: ”মা” এই শব্দ দ্বারা কোনো কাজ হচ্ছেনা। তাহলে এটি নাম প্রকৃতি। অপরদিকে ”কর” এই শব্দটি দ্বারা কাজ বোঝায়। যেমন কাজটি কর। তাই এটি ক্রিয়া প্রকৃতি।
প্রত্যয় কাকে বলে?
ধাতু বা শব্দের শেষে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন হয়, তাকে প্রত্যয় বলা হয়।
যেমন: চল্+অন্ত=চলন্ত, ঢাকা+আই= ঢাকাই।
প্রত্যয় কত প্রকার?
প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা-
- কৃৎ প্রত্যয় এবং
- তদ্ধিত প্রত্যয়।
কৃৎ প্রত্যয় কাকে বলে?
ধাতু যোগে যে প্রত্যয় গঠিত হয়, তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলা হয়। কৃৎ প্রত্যয় সাধিত শব্দ কে বলা হয় কৃদন্ত শব্দ।
যেমন: বর্তমান=√বৃত+মতুপ
কৃৎ প্রত্যয় কয় প্রকার?
কৃৎ প্রত্যয় আবার দুই প্রকার।
1. সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়। যেমন: √চ+অ=চয়
2. বাংলা কৃৎ প্রত্যয়। যেমন: √হাস+ই=হাসি
তদ্ধিত প্রত্যয় কাকে বলে?
শব্দ যোগে যে প্রত্যয় গঠিত হয়, তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়। তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দ কে বলা হয় তদ্ধিতান্ত শব্দ।
যেমন: মানব=মনু+ষ্ণ
তদ্ধিত প্রত্যয় কয় প্রকার?
তদ্ধিত প্রত্যয় আবার দুই প্রকার।
1. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন: মনু+অ=মানব
2. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন: কথা+টি= কথাটি
প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয়ের বা সহজে মনে রাখার ১০টি সূত্র :
১ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ”ব” প্রত্যয় যুক্ত থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “ষ্ণ” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
মানব=মনু+ষ্ণ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
দানব=দনু+ষ্ণ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
ইত্যাদি।
২ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ”মা” এবং ”ম”প্রত্যয় থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “ইমন” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
নীলিমা=নীল+ইমন । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
পূর্ণিমা =পূর্ণ +ইমন । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
দ্রাঘিমা =দীর্ঘ +ইমন । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
মহিমা =মহৎ +ইমন । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
৩ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ‘ইক’ প্রত্যয় থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “ষ্ণিক” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ :
সাহিত্যিক=সাহিত্য+ষ্ণিক । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
সামাজিক =সমাজ +ষ্ণিক । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
হৈমন্তিক =হেমন্ত +ষ্ণিক । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
ধার্মিক =ধর্ম +ষ্ণিক । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
৪ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ‘মান’প্রত্যয় থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “মতুপ/শানচ” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
কীর্তিমান =কীর্তি+মতুপ/শানচ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
বুদ্ধিমান =বুদ্ধি +মতুপ/শানচ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
শ্রীমান =শ্রী+মতুপ/শানচ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
বর্তমান=√বৃত+মতুপ/শানচ । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
বর্ধমান =√বৃধ+মতুপ/শানচ । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
আপনার হয়তো লক্ষ্য করেছেন, এখান ” মতুপ” ও “শানচ” দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন হতে পারে দুইটার কোনটি ইউজ করব। এখানে উত্তর হচ্ছে যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই হবে। এতে কোন সমস্যা নেই। যেহেতু যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই হবে তাই আমরা উদাহরণে দুটোই ব্যবহার করে দেখিয়েছি।
৫ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ‘বান’ প্রত্যয় থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “বতুপ” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
দয়াবান=দয়া+বতুপ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
পূণ্যবান=পূণ্য +বতুপ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
মেহেরবান =মেহের +বতুপ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
মূল্যবান =মূল্য +বতুপ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
৬ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ‘তা’ প্রত্যয় থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “তৃচ” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
দাতা=√দা+তৃচ । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
মাতা =√মা+তৃচ । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
বিধাতা =√বি +ধা+তৃচ । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
বহতা =√বহ +তৃচ । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
৭ নং সূত্র:
শব্দের শেষে যদি ‘ল’প্রত্যয় থাকে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “লচ” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
শীতল=শীত+লচ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
শ্যামল=শ্যান+লচ । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
৮ নং সূত্র:
শব্দের শেষে ‘বী’ প্রত্যয় থাকলে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “বিন” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
মেধাবী=মেধা+বিন । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
মায়াবী =মায়া+বিন । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
৯ নং সূত্র:
শব্দের শেষে ‘অক’ প্রত্যয় থাকলে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “নক/অক” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
নায়ক =√নী+নক/অক । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
গায়ক=√গৈ+নক/অক । এটি কৃৎপ্রত্যয়।
আপনার হয়তো লক্ষ্য করেছেন, এখান ” নক” ও “অক” দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন হতে পারে দুইটার কোনটি ইউজ করব। এখানে উত্তর হচ্ছে যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই হবে। এতে কোন সমস্যা নেই। যেহেতু যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই হবে তাই আমরা উদাহরণে দুটোই ব্যবহার করে দেখিয়েছি।
১০ নং সূত্র:
শব্দের শেষে ‘ই’ প্রত্যয় থাকলে তাহলে আমরা মূল শব্দের সাথে “ষ্ণি” যুক্ত করবো। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ:
রাবনি=রাবন+ষ্ণি । এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয় করার জন্য আমরা আপনাদের কিছু সূত্র উপস্থাপন করলাম। কিন্তু তখনই আপনারা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয় করতে পারবেন, যখন আপনারা বেশি বেশি প্র্যাকটিস করবেন। তাই বেশি বেশি পড়ুন এবং লিখুন।
আমাদের অন্যান্য পোস্ট পেতে ভিজিট করুন এখানে।
ক্যাম্পাস নিউজ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন এখানে
Excellent
Thanks