স্বদেশ প্রেম রচনা | 1000 + শব্দে স্বদেশপ্রেম রচনা

আজ আমরা জানবো স্বদেশ প্রেম রচনা। স্বদেশ প্রেম প্রত্যেক মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যার স্বদেশ প্রেম নেই, সে দেশের জন্য ক্ষতিকর। স্বদেশ প্রেম রচনাটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম। আজ আমরা পূর্ণাঙ্গ স্বদেশ প্রেম রচনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।

স্বদেশপ্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা

ভূমিকা: নিজের দেশকে ভালোবাসে না এমন মানুষ কে আছে? নিজের দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসাই হচ্ছে দেশ প্রেম। দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুন। যা আমরা আপনি পেয়ে থাকি। সামাজিক মানুষের দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ই হল দেশপ্রেমের উৎস। বিশ্বের যে ভূখণ্ডে মানুষ জন্ম নেয়, সে দেশের আলো-বাতাস, ধূলিকণায় তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ই হলো তার স্বজন। আর সেই দেশের প্রতি ভালোবাসা হল দেশপ্রেম। দেশপ্রীতি মানুষের এক মহৎ উত্তাধিকার। তাইতো কবি বলেছেন,

সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে।

দেশপ্রেমের স্বরূপ:

স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম, যে নিজের দেশকে ভালোবাসে সে বিশ্ব প্রেমিক, প্রেমিক ও মানবতাবাদী। যে কোন ব্যক্তি স্বদেশের মাটি, দেশের মানুষ, দেশের পানি, আকাশ-বাতাস, পরিবেশ এসব এর মধ্যে শিশুকাল থেকেই বড় হতে থাকে। স্বদেশের সঙ্গেই গড়ে ওঠে তার নাড়ির সম্পর্ক। তার দেহ ,মন, বিশ্বাস, আদর্শ সবকিছুই স্বদেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা পুষ্ট। স্বদেশের জন্য তার কৃতজ্ঞতা, কর্তব্য, দায়িত্বের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। বস্তুত মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসার মধ্যেই দেশপ্রেমের মূল নিহিত। এর ফলে দেশের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে গড়ে ওঠে এক বন্ধন। ভালোবাসার আবেগীয় প্রকাশ হচ্ছে দেশ প্রেম। শুধু মুখে মুখে এই ভালবাসার কথা বললেই দেশ প্রেম হয় না। বস্তুত কাজে রূপান্তর করতে হবে। যেমন আত্মত্যাগ, বীরত্ব, সরলতা, স্বার্থহীনতা, দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদি।
দেশ ও দেশের প্রতি মানুষের যে বন্ধন ও আকর্ষণ তা থেকেই দেশপ্রেমের উৎপত্তি। দেশ ও দেশের প্রতি মানুষের এই মমত্ববোধ চিরন্তন। দেশ যত ক্ষুদ্র ও দারিদ্র হোক না কেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক’ মানুষের কাছে তার জন্মভূমি সবার সেরা। এমনকি তারা নিজের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করে না।

দেশ ও জাতির জীবনে যখন সুখের প্রাচুর্য তখন মানুষের স্বদেশপ্রেম থাকে গভীর ঘুমে মগ্ন। নির্যাতনের আঘাতে আঘাতে সেই সুপ্ত মগ্নতার আবরণ উন্মোচন হয়। দেশের যখন সংকট মুহূর্ত, যখন দেশের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত হতে থাকে, তখন আসল দেশপ্রেমিকদের চেনা যায়। তখন দেশাত্মবোধ, শ্রেণি -ধর্ম -বর্ণ -গোত্র সব ভুলে একই চেতনা দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে। স্বদেশ প্রেম তখন মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। সবাইকে একই চেতনায়, এক প্রাণ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চালিত করে। গড়ে ওঠে মানব সম্প্রীতি। দেশের মর্যাদা এর জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয় মানুষ। শত শত মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই দেশপ্রেম ও দেশপ্রেমের প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয়তাবোধ হল স্বদেশপ্রেমের প্রধান উৎস।

দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও দৃষ্টান্ত:

স্বদেশ প্রেম উদার ও খাঁটি। স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ নানাবিধ। প্রকৃত দেশ প্রেমিক এর মধ্যে কোন সংকীর্ণ চিন্তা থাকে না। দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি দেশপ্রেমিকের মনে বিরাজ করে। দেশের স্বার্থকে তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকে। নিজের অহংকার, মেধা ও গৌরব স্বদেশের জন্য নিবেদন করে। তেমনি দেশের দুর্দিনে নিঃশর্ত আত্মত্যাগী হয়ে ওঠে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা লড়াইয়ে যেমন জীবন দিয়েছিলেন তিতুমীর। তাদের আত্মত্যাগের তুলনা হয়না। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিয়েছেন রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, লক্ষ লক্ষ মা বোন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সহ প্রমুখ নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দেশকে আগলে রেখেছেন। এছাড়াও ইতালির গ্যারিবাল্ডি, তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা, চীনের মাও সেতুং। রাশিয়ার লেলিন সহ প্রমুখ দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে নিজ মহিমায় ভাস্বর। দেশপ্রেমের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল।

দেশে দেশে যুগে যুগে দেশপ্রেমিক‘ সংগ্রামী মানুষেরা এভাবেই দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। কেউ ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গেয়েছেন, কেউ হয়েছে গুলিবিদ্ধ। তাদের এই আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ এর মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এই বিপ্লবী বীরদের জীবন কাহিনী ও স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত মানব ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী চে গুয়েভারা বলেছিলেন, কাপুরুষ মারো, গুলি করো। তোমাদের গুলিতে মরবে শুধু মানুষটি। তিনি 11 মাস গেরিলা যুদ্ধের পর আহত অবস্থায় ধরা পড়ে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন গোটা লাতিন আমেরিকায় উচ্চারিত হয়েছিল, আমরা তোমাকে কখনো ভুলবো না, ভুলতে দিব না। এসকল ইতিহাস থেকে আমরা বলতে পারি,

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

আপনারা পড়ছেন স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশপ্রেমের উপায়:

স্বদেশের উপকারে নেই যার মন,
কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।

ইসলামে ঘোষিত হয়েছে, “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ”। পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই যেখানে, দেশকে ভালোবাসার কথা বলা হয়নি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মানুষ যেকোনো স্থান থেকে দেশকে ভালবাসতে পারে। জাতির জন্য, দেশের জন্য, প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। তা যত ছোট হোক না। কৃষক কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে, সাহিত্যিক তার সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারেন। স্বদেশপ্রেমের উদ্বুদ্ধ হলে মানুষকে ভালবাসতে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম, মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, একে ফজলুল হক প্রমুখ ব্যক্তিদের অবদান পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের দেশকে উজ্জ্বল করে। অর্থাৎ দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে হবে।

স্বদেশপ্রেমর উগ্রতা:

দেশপ্রেমে যেখানে মানুষের উন্নত বৃত্তি, সেখানে তা ত্যাগ তিতিক্ষার গৌরবের বস্তু, অহংকারের বস্তু। কিন্তু উগ্রতা অন্ধ ও জাতির জীবনে তা বিপদজনক। জাতির জীবনে ডেকে আনে সর্বনাশা পরিণতি। মানুষের শুভবুদ্ধি কে আচ্ছন্ন করে। জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। একসময় ইউরোপ ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদের রক্তাক্ত হানাহানিতে যুক্ত। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই দুইবার বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদের অনির্বার্য পরিনাম। সুতরাং দেশপ্রেমকে আমাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে এবং উগ্র দেশপ্রেমকে কবর দিতে হবে।

দেশপ্রেম ও রাজনীতি:

বস্তুত রাজনীতিবিদদের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে দেশ প্রেম। দেশপ্রেমের মূল কথাই হচ্ছে তাদের প্রধান বাক্য। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ দেশের সদা জাগ্রত প্রহরী। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদদের চেহারা ভিন্নতর। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বৃহত্তর কল্যাণ থেকে দূরে। ব্যাক্তি চিন্তা এবং স্বার্থচিন্তা তাদের ঘিরে রেখেছে। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের প্রয়োজনে, সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার সাধনা এখন তাদের মধ্যে দেখা যায় না।

স্বদেশপ্রেম রচনার পাশাপাশি আপনারা এই রচনাগুলোর তে পারেন করতে পারেন:

শিক্ষা সফর রচনাঅধ্যবসায় রচনা
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
শ্রমের মর্যাদা রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম ও আমাদের কর্তব্য:

পৃথিবীতে বিপ্লবী, ত্যাগী ও মহৎ স্বদেশপ্রেমিক মানুষের সংখ্যা কম নয়। দেশে দেশে এই মহৎ স্বদেশপ্রেমিক মানুষেরা তাদের আদর্শ রেখেছে। তারা এই পৃথিবীকে করতে চেয়েছেন সুন্দর ও শান্তিময়। কিন্তু মানুষের এই স্বপ্ন এখনো সার্থক হয়নি। লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের সেই আদর্শকে আমরা এখনো প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আজও পৃথিবীতে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, অশান্তি রয়ে গেছে। মানুষের সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণ ছাড়া এইসব আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ প্রকৃত মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। যদি আমরা সেই বিপ্লবী দেশপ্রেমিকদের মর্যাদা প্রদান করতে চাই, তাহলে তাদের আদর্শকে মূল্য দিতে হবে। এজন্য আমাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। স্বদেশপ্রেমের জন্য কাজ করতে হবে। স্বদেশপ্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।

যে নিজের দেশকে ভালোবাসে না, তার দ্বারা দেশের উন্নতি কোনভাবে সম্ভব নয়। এমন লোকদের জন্য দেশে দুর্নীতি বেড়ে যায়। হানাহানি মারামারি বৃদ্ধি পায়। দেশের ক্ষতি বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের উচিত দেশকে ভালোবাসা।


উপসংহার:

স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে.
কে বাঁচিতে চায়,
দাসত্ব শৃংখল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়

এই কথাগুলো বলেছিলেন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বদেশপ্রেম মানব জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ। সকলের মধ্যে এই স্বদেশ প্রেম থাকা উচিত। স্বদেশ প্রেমের মূল লক্ষ্য মানুষকে ভালোবাসা, মানুষের জন্য কাজ করা। ব্যক্তি স্বার্থকে ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। সুতরাং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কিছু অবদান রাখা প্রত্যেকটি দেশ প্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

You may like it: রচনা লেখার নিয়ম

আশাকরি স্বদেশ প্রেম রচনা টি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। স্বদেশ প্রেম রচনা পড়ার পাশাপাশি আমাদের স্বদেশপ্রেমে নিজেদের উদ্বুদ্ধ হতে হবে। যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। স্বদেশপ্রেম রচনা পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের রচনা পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের ওয়েবসাইট আপনার বুকমার্কে সেভ করতে পারেন। কারন বিভিন্ন ধরনের এডুকেশনাল আপডেট আমরা দিয়ে থাকি।

Leave a Comment