শ্রমের মর্যাদা রচনা – ১২০০ শব্দে শ্রমের মর্যাদা

আজ আমরা জানবো শ্রমের মর্যাদা রচনা। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে রচনার ক্ষেত্রে শ্রমের মর্যাদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় এই রচনাটি আসে। অনেকেই রচনাটি অনলাইনে খুজে থাকি। কিন্তু পাইনা। তাই আজ আমরা সঠিকভাবে এবং প্রাঞ্জলভাবে আপনাদের শ্রমের মর্যাদা রচনা সরবরাহ  করব। 

ক্লাস ৬ থেকে ১০ পর্যন্ত বিভিন্ন কোর্স ফ্রিতে করতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন: Learning View Bd

শ্রমের মর্যাদা রচনা

শ্রমের মর্যাদা রচনা

ভূমিকা

 A hard-working street cleaner is a better man than a lazy scholar.

অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত বিশ্বসভ্যতার প্রত্যেকটি সৃষ্টি উল্লাস এর মূলে রয়েছে শ্রম। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সব কাজ যেমন খাদ্য, বস্ত্র, অন্ন, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি যা কিছু অর্জিত হয়েছে সবিই শ্রমের  দ্বারা। পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, ”লাইসা লিল ইনসানে ইল্লা মা সাত্তা”। অর্থ- ”মানুষের জন্য শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই”। 

বিজ্ঞানের চমৎকার আবিষ্কার, ধর্ম সাধকের আত্মউপলব্ধি, যোদ্ধার যুদ্ধে জয়লাভ, সবকিছুই শ্রম লব্ধ। মানুষ তার উদ্যম প্রচেষ্টা ও নিরলস শ্রম দিয়ে এই পৃথিবী কে জয় করেছে। মানুষের এই জয়ের ইতিহাস ই বর্তমান পৃথিবীর চিত্র। 

শ্রমের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা:

বিখ্যাত মনীষী দয়স্তযভস্কি বলেছেন, মানুষের কাছে তার জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কিছুই নেই। এই জীবন সে একবার ই পায়। বর্তমান পৃথিবীর মানুষের জীবন ও দর্শন আজ জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ।  জীবনকে যতভাবে সুখী, সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ করে তোলা যায়, সে চেষ্টাই আজ পৃথিবীর মানুষের লক্ষ্য। আর সেজন্য তার শ্রম ও সাধনার অন্ত নেই। জীবনকে সফল করতে হলে শ্রম এর কোন বিকল্প নেই। 

Man is the architect of his own fate.

মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্যের নির্মাতা। 

আর এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে প্রয়োজন হয় শ্রম। যে মানুষ কর্মজীবনে শ্রমকে লক্ষ্য করেছে, জীবন সংগ্রামে তার জয় হয়। সাফল্যের চাবিকাঠি পরিশ্রমী মানুষের যথার্থ হাতিয়ার। সাফল্যের স্বর্ণশিখরে যাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে শ্রম। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। মানবজীবনে। কর্মমুখর প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এজন্য প্রয়োজন শ্রম। কর্মশালা আর জীবন মাত্রই পরিশ্রমের ক্ষেত্র। 

The Dignity of Labor makes a man self-confident and high ‍ambitious. so, the evaluation of Labor is essential.

আমরা যা কিছু করতে চাই না কেন, সাফল্য অর্জন ও সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি-প্রয়োজন শ্রম।  একুশ শতকের এই প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে শ্রম ছাড়া কোন কিছু অর্জিত সম্ভব নয়। পৃথিবীতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে নতুন স্বপ্ন। পৃথিবীর মানুষ এই স্বপ্নে বিভোর। এই নতুন জীবন দর্শনের মূল কথাই হচ্ছে জীবনকে পরিপূর্ণ করা। এজন্যই এত আয়োজন, উদ্যোগ ও সাধনা। জীবনে দুঃখ আছে, গ্লানি আছে, পরাজয় ও ব্যর্থতা আছে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। মানুষ তার উদ্যম, প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে এই ব্যর্থতা কে জয় করেছে এবং জয় করে চলছে। মানুষের এই জয়ের ইতিহাস দিকে দিকে ঘোষিত হচ্ছে। শ্রম এর ফলেই সফলতাকে তারা ধরতে পারছে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, নৈপুণ্যে, দক্ষতায়, শিল্প-সাহিত্যে, আবিষ্কারে, উদ্ভাবনে ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে তারা সাফল্যের শিখরে যাচ্ছে। তাই শ্রমের মর্যাদার গুরুত্ব অপরিসীম। 

আপনারা পড়ছেন, শ্রমের মর্যাদা রচনা।

সৌভাগ্য ও প্রতিভা বিকাশে শ্রমের ভূমিকা: 

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা। শ্রম মানুষকে সুন্দর ও সার্থক করেছে। জীবনকে প্রতিমুহূর্তে অর্থময় করেছে। ফুলের মত ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রতিভার সৌরভ। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সাহিত্যে-শিল্পে মানুষ এর সাফল্য পরিশ্রমের ফল। সেই সাফল্যের অকৃপণ দানেই এই মানবসভ্যতা যুগযুগান্তর ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে। 

শ্রম এর প্রকারভেদ: 

শ্রম কে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন মানসিক ও শারীরিক শ্রম। এই উভয় প্রকার শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। 

মানসিক শ্রম:

মানসিক শ্রম ছাড়া মানসিক উন্নতি সম্ভব নয়। কথায় বলে, ”অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”. অলস ব্যক্তির মনে কখনো সুচিন্তা উদ্ভব হয় না। পক্ষান্তরে পরিশ্রমী ব্যক্তির মস্তিষ্ক সবসময় কুচিন্তা থেকে দূরে থাকে। বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, চিকিৎসক, অর্থনীতিবীদ, রাজনীতিবিদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিশ্রম মূলত মানসিক। তবে তাদের এই মানসিক শ্রমকে বাস্তবে রূপায়িত করতে প্রয়োজন কায়িক পরিশ্রম। 

শারীরিক শ্রম:

জগতের সকল প্রাণীকে বেঁচে থাকার জন্য কমবেশি শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক পরিশ্রম করতে হয়। মানসিক শ্রম একটা কাজের উদ্দীপনা যোগায়। আর সেই কাজকে পরিপূর্ণ করতে প্রয়োজন শারীরিক পরিশ্রম। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে শারীরিক শ্রমের জন্য হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। শারীরিক শ্রম আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয়। বরং সমাজের প্রতিষ্ঠা লাভের উপায়। চাষি, শ্রমিক, কুলি-মজুর এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েই শারীরিক শ্রমে অবতীর্ণ হয়। তাই আমাদের এই সকল মানুষদের যেমন সম্মান করা প্রয়োজন, তেমনি তাদের শ্রমকে সম্মান করা প্রয়োজন। 

শ্রমের মর্যাদা রচনার পাশাপাশি আরো কিছু রচনা পড়ুন:

অধ্যবসায় রচনা
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
শিক্ষা সফর রচনা

রচনা লেখার নিয়ম

শ্রম ও সভ্যতা:

যুগে যুগে মানব সভ্যতার যে ক্রমবিস্তার তা লক্ষ-কোটি মানুষের শ্রম এর দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। মানুষ তার শ্রমের মাধ্যমে সাজিয়েছে সভ্যতার প্রাচীর। একবিংশ শতাব্দীর এই সভ্যতার মূলে আছে মানুষের নিরলস শ্রম। শ্রম শুধু ব্যক্তিজীবনকে সার্থকতায় সমৃদ্ধ করে তা নয়, সভ্যতা বিকাশের হাতিয়ার এই শ্রম। বর্তমান মানবজাতি যে সভ্যতার উচ্চ আসনে আরোহন করেছে তা শুধুমাত্র হাজার হাজার দিনের পরিশ্রমের ফল। পৃথিবীকে সুন্দর মানুষের বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলার মূলে রয়েছে শ্রম। পৃথিবীতে যে জাতি যত পরিশ্রমি, সে জাতি তত বেশি উন্নত। যেমন রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, জার্মানি প্রভৃতি দেশ। 

ব্যক্তিজীবনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা:

শ্রম শুধুমাত্র সমষ্টির জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তা নয়, ব্যক্তিজীবনেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। যে ব্যক্তি অলস এবং শ্রমবিমুখ তার জীবনে নেমে আসে অসুন্দরের অভিশাপ। নানা ব্যর্থতার গ্লানি তে সে জীবনের পদে পদে ব্যর্থ হয়। তার জীবনের স্বাভাবিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। জীবনের সাফল্য স্পন্দিত প্রাঙ্গণে তাড়াতার নেই প্রবেশের  ছাড়পত্র। থাকে শুধু অভিশপ্ত জীবন সীমাহীন লাঞ্ছনা। শুধুই প্রাণ ধারণের গ্লানি। পক্ষান্তরে পরিশ্রমী মানুষ দেহ-মনে সুস্থ ও সুন্দর। সার্থকতার ছন্দে সে জীবন নিত্য উচ্ছলিত। শ্রমের ক্লান্তি তার জীবনের বিশ্রামের মাধুর্য ছড়িয়ে দেয়। 

বলা হয়ে থাকে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের ঘর। যদি আপনি অলস হন, তাহলে আপনি নিস্তেজ হয়ে যাবেন। যেমন আপনি একটি কম্পিউটার ক্রয় করলেন, যদি আপনি কম্পিউটার ব্যবহার না করেন। তাহলে সেটি নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনি যদি আপনি আপনার শরীরকে কাজে না লাগান, কায়িক পরিশ্রম না করেন, তাহলে আপনার শরীরের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি আপনার শরীরকে একটি মেশিনের সাথে তুলনা করুন। তাহলেই সবচেয়ে ভালো একটি উদাহরণ হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত পরিশ্রম করা।এজন্য শ্রমের মর্যাদা ব্যাপক।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা:

আমাদের প্রিয় নবী রাসূল(সা:) শ্রম এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি নিজেও শ্রমিকের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন। শ্রমিকদের দেহের ঘাম শুকানোর আগেই তিনি তার পারিশ্রমিক শোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা কে প্রতিষ্ঠা করেছেন। 

শ্রমের মর্যাদা ও আমাদের কর্তব্য:

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শারীরিক শ্রমের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের অবজ্ঞা ও ঘৃণা রয়েছে। ফলে শিক্ষিত সমাজের একটি বিরাট অংশ শারীরিক শ্রম থেকে দূরে সরে গেছে। এর ফলে নেমে এসেছে চরম বেকারত্ব। আর এই শ্রমবিমুখতার কারণেই আমরা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। দুঃখ দারিদ্র অভাব-অনটন ইত্যাদি আমাদের জীবনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই চক্র থেকে পুরোপুরি আমরা বের হতে পারছি না। আবার বের হওয়ার চেষ্টাও করছি না। এমন নিদারুণ জীবনকে আঁকড়ে ধরে আমরা বাঁচার চেষ্টা করছি। এই বাঁচার মধ্যে আছে না কোনো না সুখ, না আছে আনন্দ। পৃথিবীর উন্নত দেশের দিকে তাকালে অবাক চোখে বিমোহিত হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না আমাদের। তারা তাদের নিরলস পরিশ্রম দ্বারা তাদের দেশকে সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত করেছে। আমরা যদি পেছনে পড়ে থাকি, উদ্যোগ গ্রহণ না করি, পরিশ্রমী না হই, তাহলে তা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতার দায় আমাদেরকেই বহন করতে হবে। যা আমরা করছি। উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র হচ্ছি। আমাদের মনে রাখতে হবে কবির সেই কথা, 

কথা কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,

দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে? 

এই সত্য আমরা ভুলে যাই। এজন্য আমরা উন্নতির স্বপ্ন দেখতে পারি কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন করতে পারি না। এর ফলে পিছিয়ে যায় আমাদের দেশ। 

তাই আমাদের সকলকে পরিশ্রমই হতে হবে। নিজেদের পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি যারা, পরিশ্রমী মানুষ তাদের সম্মান করতে হবে। যদি কেউ খেটে খায়, তাহলে তাদের অসম্মান করা যাবে না। চাষাভূষা, কুলি-মজুর সকলেই আমাদের জন্য কাজ করছে। আমাদের পৃথিবী কে সুন্দর ও কোমল করার জন্য কাজ করছে। প্রত্যেকটি কাজেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়েছে। আমরা চেষ্টা করব নিজেরা নিজেদের কাজ করার করার, পরিশ্রমী হওয়ার। আর যারা পরিশ্রমী  রয়েছে, তাদের সম্মান করা. তাহলে তারা আরো বেশি পরিশ্রমী হতে পারবে। এর ফলে এগিয়ে যাবে আমাদের দেশ, আমাদের সভ্যতা ও আমাদের পৃথিবী। 

উপসংহার:

পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি। শ্রমের গৌরব ঘোষণা আজ দিকে দিকে। একমাত্র শ্রম শক্তির মাধ্যমে জীবনে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও পরিপূর্ণতা। নিরলস শ্রম সাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবজগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করেছে। সুতরাং জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই। আর তাই শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। 

আশাকরি, শ্রমের মর্যাদা রচনা টি আপনারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও আপনারা অন্যান্য রচনা পড়তে পারেন। আশাকরি শ্রমের মর্যাদা নিয়ে প্রবন্ধ লিখতে আপনাদের কোন সমস্যা হবে না। যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান।

Leave a Comment