শিক্ষা সফর রচনা | শিক্ষা সফর নিয়ে ফুল একটি রচনা

ধারাবাহিক রচনা এর অন্তর্গত হিসেবে আজ আমরা জানবো, শিক্ষা সফর রচনা।  এর মাধ্যমে আপনারা শিক্ষা সফর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যেমন, শিক্ষা সফরের গুরুত্ব, শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য, শিক্ষা ও শিক্ষা সফর এর সম্পর্ক ইত্যাদি। আশা করি, শিক্ষা সফর রচনা এর জন্য আপনাদের আজকে এই পোস্ট যথেষ্ট হবে। 

শিক্ষা সফর রচনা

শিক্ষা সফর রচনা

ভূমিকা: মানুষ এর জীবন নদীর সাথে তুলনা করা যায়। যেমন, নদীর প্রবাহ বহমান ও গতিশীল। মানুষের জীবন তেমন গতিশীল ও বহমান। তাই মানুষ বিচিত্র জগতের রহস্য উদঘাটনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। তাইতো রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি, 

দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী, 

মানুষের কত কীর্তি কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, 

কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু, 

রয়ে গেল অগোচরে। 

বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, শিক্ষামূলক স্থান আমরা ভ্রমণ করি জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে। কারণ জ্ঞান লাভের ২টি উপায় রয়েছে। একটি হচ্ছে বইপড়া। অপরটি হচ্ছে শিক্ষা সফর। তাই শিক্ষা সফরের গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষা সফর এর উদ্দেশ্য: 

আমরা জানি, শিক্ষা অর্জন করার দুইটি উপায় হচ্ছে বইপড়া এবং শিক্ষা সফর করা। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের মনে যতটা জ্ঞান অর্জিত হয়, যদি আমরা বাস্তবে সেই জ্ঞান আহরন করি তা অনেক বেশি স্থায়িত্ব লাভ করে। মূলত আনন্দের সাথে জ্ঞান এর উপর নির্ভর করে, শিক্ষা সফর এর উদ্ভব হয়েছে। শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য এই নয় যে, ঘোরাঘুরি কিংবা পিকনিক করা। মূলত একটি নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান বাছাই করে, সেখানে ইতিহাস লব্ধ জ্ঞান, বিচিত্র রহস্য উদঘাটন ইত্যাদির মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করা শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য।

মূলত শিক্ষাসফর হচ্ছে বাইরের জগতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। আমরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিষয় জ্ঞান আহরন করি। আমরা যে সকল বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরন করি তার প্রত্যেকটি প্রায় বাস্তব উদাহরণ এর সাথে সম্পর্কিত। পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে বাস্তব জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব হয় না। পৃথিবীতে রয়েছে কত বিচিত্র স্থান, ঐতিহাসিক স্থান, কত নদী, সমুদ্র ,পর্বত। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে এগুলো উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না। প্রয়োজন পুঁথিগত বিদ্যার এবং বাস্তব জ্ঞান এর সমন্বয়। এজন্য শিক্ষা সফরের গুরুত্ব অপরিসীম। 

বই পড়ে কোন একটি বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর শিক্ষা সফরের আয়োজন করে। শিক্ষাসফর শুধুমাত্র একাডেমিক প্রয়োজন মেটানো নয় বরং শিক্ষা সফরের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভাবের আদান-প্রদান হয়। যে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারা শুধু কয়েকটি বইয়ের পাতা পড়ে দেশের কারিগর হতে পারবে না। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা সফর। কারণ শুধুমাত্র কয়েকটি বইয়ের পাতার মধ্যে জ্ঞান সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার আলো সর্বত্র বিচরণ করে। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে সেই বিচারকে আহরণ করা সম্ভব হয়। ভ্রমণের আনন্দ একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করার মাধ্যমে শিক্ষা সফর হয়ে ওঠে জ্ঞানের মহাসমুদ্র। 

শিক্ষা সফরের গুরুত্ব:

পৃথিবীতে যত অবদান সবকিছু পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে সম্ভব হয়নি। আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের রয়েছে ইতিহাস। ইতিহাস কে যদি আপনি ধারণ করতে না পারেন, তাহলে আপনার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে না। অর্থাৎ দেশপ্রেম জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজন ইতিহাস জানা। এখন আসি দেশপ্রেম কেন প্রয়োজন? ”আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্য “ এই বাক্যটির সাথে আমরা সবাই সুপরিচিত। আমরা এই বাক্যটি সজ্ঞান এবং অজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রে বলে যাচ্ছি। কিন্তু এর মর্মার্থ আমরা বুঝতে পারি না। কারণ যদি বুঝতাম তাহলে কোন দেশেই কোন অন্যায়-দুর্নীতি থাকত না। অর্থাৎ আমাদের মাঝে দেশ প্রেম জাগ্রত নেই। যদিও আমরা বলি দেশ প্রেম গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে এখানে একটি অভাব রয়েছে। সেই অভাবের কারণে আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারছি না। একটি জাতির গঠিত হয় অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে। এই ত্যাগ তিতিক্ষা শুধুমাত্র বই পড়ে উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, বীর দের স্মৃতি দর্শন এর মাধ্যমে আপনার মধ্যে অনুভূতি জাগ্রত হবে।

শিক্ষা সফর রচনা এর মতো অন্যান্য রচনা পাবেন: এখানে

অর্থাৎ ইতিহাসকে চাক্ষুষ ভাবে উপলব্ধি করতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে আপনি সেখানে বর্তমান। তাহলেই আপনার মাঝে দেশ প্রেম জাগ্রত হবে। আপনি দেশের জন্য কাজ করতে পারবেন। এইযে চাক্ষুষ ভাবে উপলব্ধি করবেন, এর জন্য প্রয়োজন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া। অর্থাৎ ভ্রমণ করা। কিন্তু এই ভ্রমন যদি হয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে, তখন তা হয়ে যায় শিক্ষা সফর। সুতরাং শিক্ষা সফরের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত মানুষ হতে পারি। শুধুমাত্র আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা সফর এর সঠিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করা। যদি আপনার শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পিকনিক বা ঘুরাঘুরি হয়, তাহলে সে শিক্ষাসফর না করাই ভালো। আর যদি আপনার শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য হয় ইতিহাস জেনে ইতিহাস লব্ধ জ্ঞান নিজের মাঝে ধারণ করা, তাহলে শিক্ষা সফরের গুরুত্ব আপনার জন্য হয়ে যাবে পাহাড় সমান। 

Read More: Juvenile Delinquency & Difference between online class and campus class.

Political candidate statement sample | city council candidate statement

তরুণ প্রজন্ম: শিক্ষিত বেকার, সম্ভাবনা এবং সমস্যা

শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষা সফর এর সম্পর্ক:

অবশ্যই শিক্ষা সফরের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আচ্ছা বলুন তো, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, চা বাগান, লালবাগ কেল্লা, ষাট গম্বুজ মসজিদ, লোকশিল্প জাদুঘর, করোতোয়া নদী, জসীমউদ্দীনের বাড়ি ইত্যাদি সম্পর্কে বইতে পড়েন নি, এমন কেউ আছেন? আসলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ ক্লাস 1 থেকে ক্লাস ১০পর্যন্ত কোন না কোন বইতে এই টপিক সম্পর্কে লেখা আছে। কেন লেখা আছে? এর কারণ হচ্ছে আপনি যেন এগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন। এগুলোর ইতিহাসকে নিজের মনে ধারণ করতে পারেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা এগুলা অনেকবার পড়ি এবং অনেকবার ভুলে যাই। কেন ভুলে যাই? কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা আমাদের মনে জায়গা করে নিতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তব জ্ঞান। সুতরাং যখন আমাদের পাঠ্যপুস্তক এর টপিকগুলো আমরা বাস্তবে উপলব্ধি করতে পারব, তখন সেগুলো আমাদের মনে গেঁথে যাবে। সুতরাং আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষা সফরের গুরুত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। 

শিক্ষা সফরের পূর্ব প্রস্তুতি:

শিক্ষা সফরের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কিছু গুছিয়ে রাখতে হবে. যেমন যদি আপনি সেখানে থাকেন, তাহলে আপনার প্রয়োজনীয় জামা কাপড়, শীতকাল হলে শীতের জামা, দৈনন্দিন জিনিস যেমন পেস্ট ব্রাশ ইত্যাদি নিতে হবে। এরপর সঠিক সময়ে যাত্রা শুরু করার জন্য বের হতে হবে। আমি এখানে যে কথাটি বলবো তা হচ্ছে, শিক্ষা সফরের জন্য মূল প্রস্তুতি হচ্ছে, মনে এই ধারণা পোষণ করা যেন আপনি জানার জন্য বের হয়েছেন। 

শিক্ষা সফরে সর্তকতা:

আমরা অনেকেই শিক্ষাসফরে যাই কিন্তু আমরা সর্তকতা অবলম্বন করি না। যেমন উঁচু কোন পাহাড়ে যখন আমরা উঠি, তখন আমরা সতর্ক না থাকার জন্য প্রতিবছর প্রায় অনেক মানুষ পাহাড় থেকে পড়ে মৃত্যু বরণ করেন। আবার অনেকেই সমুদ্র সৈকতে বিপদ সীমার দিকে সাঁতরে যাওয়ার কারণে, পানিতে ডুবে মারা যায়। এমন ঘটনা আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রচুর দেখতে পাই। এর একটি কারণ হচ্ছে অসতর্কতা। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি যাচ্ছেন জানার জন্য, জ্ঞান আহরণ করার জন্য। এখানে অবশ্যই জ্ঞান আহরণ করতে হবে। হ্যাঁ, আপনি জ্ঞান আহরণ করার জন্য পাহাড়ে উঠতে পারেন। কিন্তু সর্তকতা অবলম্বন সবক্ষেত্রে করতে হবে। যেন শিক্ষাসফর আপনার মৃত্যু সফর না হয়। 

উপসংহার:

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভ্রমণ অত্যাবশ্যক। জীবনের সব ক্ষেত্রে আমরা ভ্রমণ করতে চাই। এটি একটি মনের স্পৃহা। এই ভ্রমণ এর উদ্দেশ্য শিক্ষামূলক করলেই হয়ে যাবে শিক্ষা সফর। শিক্ষা সফরের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। শিক্ষা সফর আমাদের মাঝে বয়ে নিয়ে আসে মমত্ববোধ ও মনুষ্যত্ব বোধ। শিক্ষা সফরের সঠিক জ্ঞান যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে, আমাদের দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে। আমরা জানতে পারব, একটি দেশ, একটি ইতিহাস কত ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে গঠিত হয়। আমরা জীবনের সঠিক গন্তব্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারব। তাই শিক্ষা সফর আমাদের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক। 

আশাকরি, শিক্ষা সফর রচনা আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। স্কুল এবং কলেজে শিক্ষা সফর রচনা পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনারা আরও বিভিন্ন ধরনের রচনা পেয়ে যাবেন। এছাড়া আপনাদের কি ধরনের রচনা প্রয়োজন আমাদের জানাতে পারেন কমেন্ট এর মাধ্যমে। 

This video helps you:

2 thoughts on “শিক্ষা সফর রচনা | শিক্ষা সফর নিয়ে ফুল একটি রচনা”

Leave a Comment