আমাদের যেকোন শিক্ষা অবস্থায় রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে রচনা এর সাথে আমরা সম্মুখীন হয়। তাই রচনা লেখার নিয়ম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি আমরা রচনা লেখার নিয়ম আয়ত্ত করতে পারি, তাহলে আমরা রচনায় বেশি নম্বর পেতে পারি। যা আমাদের পরীক্ষায় সাহায্য করবে।

তাই আমরা জানবো প্রবন্ধ লেখার নিয়ম।
রচনা কাকে বলে?
রচনার অর্থ সৃষ্টি, নির্মাণ। যেমন, গল্প রচনা, উপন্যাস রচনা, কাব্য রচনা, প্রবন্ধ রচনা ইত্যাদি। যে লেখায় নতুন কিছু সৃষ্টি হয় অর্থাৎ পরিস্ফুটন হয় তার নাম রচনা। তবে স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অর্থে রচনা শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তখন এর অর্থ হয় প্রবন্ধ। ছাত্র-ছাত্রীর ক্ষেত্রে এই অর্থ একটু বিশিষ্টতর। অর্থাৎ নিজেদের লেখার চেষ্টা। কোন বিষয় নিয়ে নিজ ভাবনা এর প্রকাশ করতে পারা নিজ ভাষায়।
প্রবন্ধ শব্দের অর্থ প্রকৃষ্ট বন্ধন। প্রকৃতপক্ষে ভাব ও ভাষার বন্ধন। ভাবকে অবলম্বন করে ভাব প্রকাশিত হয়। এই ভাবধারাকে বহন করে ভাষা। ভাব গুরুগম্ভীর হলে ভাষা সে অনুযায়ী গুরুগম্ভীর হয়। অন্যদিকে, ভাব হালকা চটুল হলে ভাষা হয় হালকা চটুল। হাসি-কান্নার যখন যেমন রস আশ্রিত ভাবের প্রকাশ হয়, ভাষাও হয় সেই মত। ভাষার বন্ধন যথাযথ হলে সে রচনা সাহিত্য গুণের বিকাশ ঘটে।
কাজেই কোন মননশীল ভাব কিংবা তথ্য বা তথ্য উপযুক্ত ভাষার মাধ্যমে যুক্তি পরম্পরায় সুসংহত ভাবে প্রকাশিত হয়ে শিল্পরূপ লাভ করলে তাকে প্রবন্ধ বলা হয়। প্রবন্ধ যে মননশীল ও যুক্তি ধর্ম হবে তা নয়। অনুভূতি প্রধান, আবেগ ধর্মী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং চিন্তা ধর্মীয় হতে পারে। ব্যক্তিভেদে প্রবন্ধের প্রকাশভঙ্গি ও যুক্তি প্রয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদি ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। একই বিষয়ে প্রবন্ধ বিভিন্ন লেখকের এর রচনায় ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশিত হয়। যে কোন রচনায় রচিয়তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যতা স্পষ্ট আকারে ধরা পড়ে।

উন্নত মানের শিল্পসৃষ্টি, বাঁধাধরা নিয়ম নির্দেশের অনুসারী হয়না। প্রতিভাবান প্রবন্ধকার রা প্রথাগত নিয়ম নির্দেশের তোয়াক্কা না করে, আপন প্রতিভা শক্তির বলে শিল্পসৃষ্টির নজির সৃষ্টি করে। তাদের রচনা এর কাঠামো ভিন্ন হতে পারে।অনুশীলন, চিন্তার গভীরতা ও যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা বাড়ায়। সুসংহত ভাবে বক্তব্য পরিবেশনের ক্ষমতা গড়ে। উপযুক্ত ভাষা ব্যবহারের নৈপুণ্য এনে দেয়। সেজন্য শিক্ষার্থীর প্রবন্ধ রচনায় নিয়মিত অনুশীলন প্রয়োজন। সুতরাং রচনা লেখার নিয়ম জানতে হলে বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে।
প্রবন্ধের অঙ্গ বিভাজন
রচনা লেখার নিয়ম সঠিকভাবে জানতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে প্রবন্ধের অঙ্গ বিভাজন সম্পর্কে।
একটি প্রবন্ধের মূলত তিনটি অংশে থাকে।
- ভূমিকা
- মূল অংশ ও
- উপসংহার
ভূমিকা:
প্রবন্ধের শুরুর অংশ বা প্রামম্ভিক অঙ্গ হচ্ছে ভূমিকা। ভূমিকার অন্য নাম হচ্ছে প্রস্তাবনা। প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়ে প্রবেশের দরজা হচ্ছে ভূমিকা। ভূমিকা রচনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূল বিষয়গুলোর প্রতিফলন ভূমিকা অংশে এমনভাবে হওয়া প্রয়োজন যেন, রচনার মূল বিষয় উত্তরণের দার খুলে যাবেই, সেই সঙ্গে বিষয়টি হৃদয়গ্রাহী হয়ে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ভূমিকা যেন অপ্রাসঙ্গিক দোষে দুষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ মূল কথাগুলো এখানে লিখতে হবে।
মূল অংশ:
ভূমিকার পরে রচনা লেখার নিয়ম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মূল অংশ। প্রবন্ধের মূল বিষয়ের আলোচনা শুরু করতে হয় এই অংশ হতে। মূল বক্তব্য পরিবেশনের আগে বিষয়টিকে প্রয়োজনীয় সংকেত অর্থাৎ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাগ করতে হয়। এতে রচনা আকর্ষণীয়তা এবং পাঠকের বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি সংকেতের কতখানি বিস্তার হবে তা তার প্রকাশের পূর্ণ তার উপর নির্ভর করে। যদি আপনার মনে হয় একটি পয়েন্ট বিশ্লেষণ করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন, তাহলে সেই পয়েন্ট বড় হতে পারে। কাজেই আয়তন গত পরিমাপ নির্দিষ্ট নয়। তবে প্রতিটি সংকেতের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সংযোজন করতে হবে।
উপসংহার:
সিদ্ধান্তমূলক সমাপ্তির অংশ হচ্ছে প্রবন্ধের উপসংহার। ভূমিকার মত সমাপ্ত এর আছে সমান গুরুত্ব। নদী যেমন উৎস থেকে যাত্রা করে গতিপথের নানা বৈচিত্র্য পিছনে ফেলে মোহনায় এসে বিশাল জলরাশির মধ্যে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নিজেকে সার্থক করে, প্রবন্ধের ভাববস্তু তেমনি ভূমিকার উৎস থেকে যাত্রা শুরু করে উপসংহারে এসে রচনাকে সার্থক করে। প্রবন্ধে, প্রবন্ধের লেখক এর ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ এর যথেষ্ট অবকাশ থাকে। উপসংহারে একদিকে যেমন আলোচনার সিদ্ধান্তে উপনীত হন লেখক, অপরদিকে তেমনি লেখকের নিজস্ব অভিমত আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।
শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স ফ্রিতে করতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব: করুন
রচনা লেখার নিয়ম: ভাষার ব্যবহার
প্রবন্ধের বিষয়েও ভাব অনুযায়ী ভাষা হয় চিন্তাশীল মনন ধর্মী প্রবন্ধের ভাষা হয় সাধারণত গুরুগম্ভীর, লঘু আবেগ ধর্মী প্রবন্ধের ভাষা হয় আবেগপ্রবণ। প্রবন্ধে বক্তব্য প্রকাশের ভাষা সহজবোধ্য ও প্রাঞ্জল হবে। পাঠক যেন লেখক এর বক্তব্য অনায়াসে ঠিক ঠিক বুঝতে পারেন। অনাবশ্যক বাগবাহুল্য প্রবন্ধের যাতে ক্ষতি না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক ও যত্নবান হতে হবে। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, প্রাঞ্জলতা প্রবন্ধের বড় গুণ। অনর্থক কথা বাড়াইওনা। অল্প কথায় কাজ হলে বেশি কথার প্রয়োজন কি? অবান্তর কথা, অতিরিক্ত কথা রচনায় দুইই বর্জনীয়। ভাষায় জটিলতা থাকলে ভাষা সাবলীল না হলে রচনা সহজপাঠ হয়না।
রচনা পড়তে পাঠকের আগ্রহ হবেনা। বরং বিরক্তি লাগবে। আর তাহলেই রচনা হয়ে যাবে ব্যর্থ। রচনার প্রধান গুণ এবং প্রথম প্রয়োজন – সরলতা এবং স্পষ্টতা। তাহলে সকলে বুঝতে পারবে এবং পড়ামাত্র যার অর্থ বুঝা যাবে। এমন রচনা ই সর্বোকৃষ্ট রচনা।
বিসিএস প্রস্তুতি, জীববিজ্ঞান mcq for biology class 9 and online bcs preparation.
bcs bangla literature pdf | বিসিএস বাংলা সাহিত্য বই

রচনা লেখার নিয়ম:
রচনায় খুব অল্প সময়ে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন করা প্রয়োজন। নীচে এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব, রচনা লেখার নিয়ম। এ বিষয়গুলো আয়ত্ব করলে আমরা রচনা লেখার দক্ষতা অর্জন করতে পারব।
১. প্রবন্ধের বিষয় অনুযায়ী যুক্তি ও তথ্যের পরিমাণ নির্ণীত হয়। পরিমানের অতিরিক্ত উৎকৃষ্ট প্রবন্ধের পরিপন্থী। অনুশীলনের দ্বারা রচিয়তা কে এই পরিমাণ আয়ত্ত করতে হবে।
২. রচনা লেখার দক্ষতা অর্জন করার জন্য প্রচুর প্রবন্ধ পড়তে হবে। এজন্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রচনা, সংবাদ, প্রতিবেদন, ভাষণ ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে নানা প্রসঙ্গে বিষয়ের ধারণা ও শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সহজেই কোনো বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা যায়। যা রচনা লেখার একটি বড় নিয়ম।
৩. প্রবন্ধের বক্তব্য বাস্তব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং যৌক্তিক পরম্পরায় উপস্থাপিত ও সন্নিবেশিত হওয়া উচিত। যেন স্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ায় সহায়ক হয়।
৪. ভাষারীতির ক্ষেত্রে সাধু ও চলিত এর মধ্যে যেকোনো একটিকে নির্বাচন করতে হবে। ভাষারীতির বিষয়গুলো সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। আধুনিক বাংলায় যেহেতু চলিত রীতির ব্যবহার বেশি, সেজন্য চলিত রীতি অবলম্বন করে প্রবন্ধ লেখা ও চর্চা করা ভালো। সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
৫. উন্নত মানের প্রবন্ধে নির্ভুল বানান ও নির্ভুল বাক্য গঠন অপরিহার্য শর্ত। শিক্ষার্থীকে অবশ্যই এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। যা রচনা লেখার নিয়ম এর গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত।
৬. রচনায় যুক্তি প্রদর্শন অথবা প্রমাণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্য কোন রচনা থেকে উদ্ধৃতির অবকাশ আছে। তবে সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় পরিমাপ এর দিকে। ঘন ঘন ও বড় বড় উদ্ধৃতি প্রবন্ধের স্বাভাবিক প্রকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রচনা লেখার নিয়ম টি ভিডিও সহকারে দেখে নিন:
রচনা লেখার নিয়ম এর মতো বিভিন্ন টিপস পেতে এবং বিভিন্ন কোর্স করতে যেমন ওয়েব ডিজাইন, সি প্রোগ্রামিং, শিক্ষামূলক বিভিন্ন কোর্স আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন:
আশা করি আপনারা খুব সহজ তবে বুঝতে পেরেছেন রচনা লেখার নিয়ম। এরপরেও সমস্যা থাকলে বা আমাদের পোস্ট পড়তে কোন সমস্যা হলে, আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।