পর্যায় সারণি- পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল সহ বিস্তারিত

আজ আমরা কথা বলবো পর্যায় সারণি নিয়ে। পর্যায় সারণি রসায়ন এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই টপিকস থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি তে বিভিন্ন প্রশ্ন হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় পর্যায় সারণি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। পর্যায় সারণি নিয়ে আপনাদের  পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে আজকের এই পোস্ট।

আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা পর্যায় সারণির যে সকল বিষয় ধারনা পাবেন: 

  • পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল 
  • পর্যায় সারণি কাকে বলে 
  • আধুনিক পর্যায় সারণি 
  • পর্যায় সারণির চার্ট 
  • পর্যায় সারণি প্রশ্ন 
  • পর্যায় সারণি pdf
  • রসায়ন পর্যায় সারণি 
  • আধুনিক পর্যায় সারণির ছবি 
  • মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি ইত্যাদি

পর্যায় সারণি: আমরা পৃথিবীতে বসবাস করছি আমাদের রয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। একটু লক্ষ করলেই বুঝতে পারবেন জাতি গোষ্ঠী একটি সমাজ গঠন করে। একটি সমাজে বিভিন্ন ধরনের জাতিগোষ্ঠী থাকে না। যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আমেরিকা, রাশিয়া ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠী। আমাদের বায়ুমন্ডলে রয়েছে অনেক মৌল।

কিভাবে মৌল গুলো থাকবে? কার সাথে কে থাকবে? অবশ্যই আমরা যেমন মিল সম্পন্ন জাতি একসাথে থাকি, তেমনই মৌলগুলোর মধ্যে যাদের মিল রয়েছে তারা একসাথে থাকবে। এই কাজটি করা হয়েছে পর্যায় সারণির মাধ্যমে।

মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পদার্থ এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে যে সকল ধারণা অর্জন করেছিল তার সম্মিলিত একটি রূপ হচ্ছে আজকের পর্যায় সারণি। পর্যায় সারণি কেবল মাত্র একজন বিজ্ঞানীর একদিনে পরিশ্রমের কারণে তৈরি হয়নি। অনেক বিজ্ঞানীর অনেক পরিশ্রমের ফলাফল হচ্ছে আধুনিক পর্যায় সারণি।

Read More: জীববিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞান কুইজ: প্রশ্ন ও উত্তর

মৌল সমূহের শ্রেণীবিভাগ এবং পর্যায়বৃত্ত ধর্ম- রসায়ন পাঠ

1789 সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, মারকারি, জিংক, সালফার ইত্যাদি মোলিক মৌল সমূহকে ধাতু এবং অধাতু এই দুইটি ভাগে বিভক্ত করেন। ল্যাভয়সিয়ে এর সময় থেকে চিন্তাভাবনা শুরু হয় কিভাবে এসকল মৌলকে একটি নির্দিষ্ট ভাবে রাখা যায়। এরপর1829 সালে বিজ্ঞানী ডোবেরাইনার লক্ষ করেন তিনটি করে মৌলিক পদার্থ একই রকমের ধর্ম প্রদর্শন করতে পারে। তিনি এ সকল মৌলগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভর অনুযায়ী সাজালেন। তিনি আরও লক্ষ করেন,

দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের যোগফলের অর্ধেক বা এর কাছাকাছি হয়, একে ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র বলা হয়।

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি :

১৮৬৯ সালের রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ সকল মৌলের ধর্ম পর্যালোচনা করেন। এরপর তিনি একটি সূত্র উপস্থাপন করেন। তা হলো,


”মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়”।

আধুনিক পর্যায় সারণি 

কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল মেন্ডেলিফের সূত্র অনেক মৌল মেনে চলে না। অর্থাৎ কিছু ত্রুটি দেখা গেল। এর ফলে ১৯১৩ সালে মোসলে নতুন একটি সূত্র উপস্থাপন করেন। তিনি সেখানে পারমাণবিক ভর এর পরিবর্তে পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলোকে সাজানোর প্রস্তাব দেন।

মোসলে বলেন, মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে অবস্থিত হয়। যা আধুনিক পর্যায় সারণির সূত্র নামে পরিচিত।

পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী পর্যায় সারণিতে মৌলের স্থান দেওয়া হলে আর্গনের পারমাণবিক সংখ্যা 18 এবং পটাশিয়ামের 19 । সুতরাং আর্গন, পটাশিয়াম এর আগে বসবে। অর্থাৎ পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী পর্যায় সারণিতে মৌলের স্থান দেওয়া হলে এই ত্রুটিসমূহ দূরীভূত হয়।

আধুনিক পর্যায় সারণির ছবি :

অনেকে আধুনিক পর্যায় সারণির ছবি দেখতে চাই। কারন ছবি চার্ট এর মাধ্যমে আমরা যদি পর্যায় সারণী শিখতে পারি, তাহলে তা আমাদের মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী হয়। একারণে তোমাদের জন্য আধুনিক পর্যায় সারণির ছবি নিচে দেওয়া হল:

আধুনিক পর্যায় সারণির ছবি

পর্যায় সারণি কাকে বলে ?

অর্থাৎ বিভিন্ন মৌলের মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মিল এবং এই সকল ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন দেখানোর জন্য মৌলগুলোকে সাজিয়ে যে সারণি গঠন করা হয়েছে, তাকে পর্যায় সারণী বলা হয়।

আধুনিক পর্যায় সারণি:

যখন পর্যায় সারণি আবিষ্কার হয় তখন ধারণা করা হতো মৌলগুলো তাদের পারমাণবিক ভর অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে। কিন্তু এর ফলে দেখা গেল একই  একই ধর্মের মৌল গুলো একসাথে থাকছে না। তাই মেন্ডেলিফ প্রবর্তন করেন যে, মৌল গুলোর পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে। এই ধারণাকে আধুনিক পর্যায় সারণি বলা হয়। যা মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি নামেও পরিচিত।

আধুনিক পর্যায় সারণি ইলেকট্রন বিন্যাস নিয়ম মেনে চলে। আর আধুনিক পর্যায় সারণির মাধ্যমে আমরা একটি মৌল পর্যায় সারণির কোন পর্যায়ে, কোন গ্রুপে, মৌলটি ধাতু নাকি অধাতু কিংবা অপধাতু ইত্যাদি জানা যায়।

আধুনিক পর্যায় সূত্র বা মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি হচ্ছে, মৌলগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের পারমানবিক সংখ্যা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।

পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল :

পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল 

পর্যায় সারণির গ্রুপ ১ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

হায় লি না কে রুবি ছেঁচে ফেলেছে 

হায় – H – হাইড্রোজেন

লি – Li – লিথিয়াম

 না – Na – সোডিয়াম

কে – K – পটাশিয়াম

রুবি – Rb – রুবিডিয়াম

 ছেঁচে – Cs – সিজিয়াম

 ফেলেছে – Fr – ফ্রানসিয়াম

পর্যায় সারণির গ্রুপ ২ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

 বিরিয়ানি – Be – বেরিলিয়াম

 মোগলাই – Mg – ম্যাগনেসিয়াম

 কাবাব – Ca – ক্যালসিয়াম

 সরিয়ে – Sr – স্ট্রোনসিয়াম

 বাটিতে – Ba – বেরিয়াম

  রাখো – Ra – রেডিয়াম

পর্যায় সারণির গ্রুপ ৩ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

বো – B – বোরন

য়াল – Al – অ্যালুমিনিয়াম

গেলো – Ga – গ্যালিয়াম

ইন্ডিয়া – In – ইনডিয়াম

তেও যাই – Ti – থ্যালিয়াম

পর্যায় সারণির গ্রুপ ১৪ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

কাল – C – কার্বন

সিলেট – Si – সিলিকন

গেলে – Ge – জারমেনিয়াম

স্বর্ন – Sn – টিন

পাবো – Pb – লেড

পর্যায় সারণির গ্রুপ ১৫ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

নানা – N – নাইট্রোজেন

পাটেকার – P – ফসফরাস

আসলো – As – আর্সেনিক

সব – Sb – অ্যান্টিমনি

বিলিয়ে – Bi – বিসমাথ

পর্যায় সারণির গ্রুপ ১৬ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

ও – O – অক্সিজেন

এস – S – সালফার

এস সি – Se – সেলেনিয়াম

তে – Te – টেলুরিয়াম

পড়ে – Po – পোলোনিয়াম

পর্যায় সারণির গ্রুপ ১৭ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

ফকিরা – F – ফ্লোরিন

কালু – Cl – ক্লোরিন

বরিসাল থেকে – Br – ব্রোমিন

ইস্টিমারে – I – আয়োডিন

আসতেসে – At – অ্যাস্টাটিন

পর্যায় সারণির গ্রুপ ১৮ এর মেীলগুলো মনে রাখার কৌশল:

হিলি – He – হিলিয়াম

নিয়ন্তা – Ne – নিয়ন

 আর – Ar – আর্গন

 কিশোর – Kr – ক্রিপ্টন

 যাবে – Xe – জেনন

 রংপুর – Rn – রেডন

Read More: সেট ও ফাংশন নবম দশম শ্রেণী ব্যাসিক টু এডভান্স একদম ক্লিয়ার

বীজগণিতের সূত্র সমূহ | বীজগণিতের সকল সূত্র সমূহ এর বাইরে নেই

পর্যায় সারণি pdf :

অনেকেই পর্যায় সারণি pdf চেয়ে থাকে। কারণ পিডিএফ পেলে তারা পরবর্তীতে সেখান থেকে পড়তে পারবে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আমরা এখানে পিডিএফ দিচ্ছি।

এখানে পাবেন: পর্যায় সারণি pdf

এই পিডিএফে পর্যায় সারণী চার্ট আকারে দেয়া হয়েছে। আপনারা খুব সহজে পর্যায় সারণির চার্ট এখান থেকে দেখে নিতে পারবেন।

পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য:

এখন আমরা পর্যায় সারণির কিছু বৈশিষ্ট্য জানবো। মূলত পর্যায় সারণি একটি টেবিল। টেবিলে যেমন সারি এবং কলাম থাকে, পর্যায় সারণিতে ও তেমন রয়েছে। পর্যায় সারণিতে মোট 118 টি মৌল রয়েছে। সেখানে পর্যায়ে রয়েছে সাতটি এবং গ্রুপ রয়েছে 18 টি। প্রতিটি পর্যায়ে বাম দিক থেকে শুরু করে ডানদিকে 18 পর্যন্ত বিস্তৃত।

মৌলগুলোর ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হলে যে বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায়:

১. একই পর্যায়ের বাম থেকে ডান দিকে গেলে মৌল সমূহের ধর্ম ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয়।
২. একই গ্রুপের মৌল গুলোর ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকমের হয়।

পর্যায় সারণী সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে নিচের ভিডিও গুলো দেখুন:

আয়নীকরণ শক্তি:

গ্যাসীয় অবস্থায় কোন মৌলের 1 মোল গ্যাসের পরমাণু থেকে 1 মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে ওই মৌলের আয়নীকরণ শক্তি বলে। আয়নীকরণ শক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। একই পর্যায়ের বামের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি এবং ডান দিকের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কম। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে আয়নিকরণ শক্তির মান বাড়ে আবার পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে আয়নিকরণ শক্তির মান কমে।

ইলেকট্রন আসক্তি:

আশা করি, আপনারা পর্যায় সারণী সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। যেমন, পর্যায় সারণি কাকে বলে, আধুনিক পর্যায় সারণি, পর্যায় সারণির চার্ট, পর্যায় সারণির প্রশ্ন, আধুনিক পর্যায় সারণির সূত্র ইত্যাদি।

2 thoughts on “পর্যায় সারণি- পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল সহ বিস্তারিত”

Leave a Comment