নৃবিজ্ঞান (অ্যানথ্রোপলজি) সাবজেক্ট রিভিউ: আজ আমাদের সাবজেক্ট রিভিউ এর বিষয় হচ্ছে নৃবিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের আপনার ক্যারিয়ার, চাকুরী, ভবিষ্যৎ সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমাদের অন্যান্য বিষয়ে সাবজেক্ট রিভিউ পেতে ভিজিট করুন এখানে।
অ্যানথ্রোপলজি সাবজেক্ট রিভিউ এর আগে কিছু কথা:
একটি কথা সব সময় বলি, যে কোন সাবজেক্টে যদি তুমি কঠোর পরিশ্রম করতে পারো তাহলে সফলতা আসবে। কারণ যে কোন সাবজেক্টে ভবিষ্যৎ রয়েছে বলেই সেই সাবজেক্ট টি ভার্সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ধরো তুমি খুব ভালো একটি সাবজেক্ট পেয়েছো কিন্তু তোমার পরিশ্রম নেই তাহলে তোমার ভাল সাবজেক্টে তোমার কিছুই হবে না। পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি এটি শুধু শুধু সত্য নয় বরং চরম বাস্তবতা। অনেকেই ভালো সাবজেক্ট পেয়ে ভাবে আমি সব পেয়ে গেছি কিন্তু পরিশ্রম না করলে তুমি কিছুই পাবে না। তাই তোমার সাফল্যের জন্য সাবজেক্ট এর চেয়ে তোমার পরিশ্রমই মূল চাবিকাঠি। আমরা মূলত সাবজেক্ট রিভিউ করি তোমাদের চেষ্টাকে একটু সহজ করতে। কিন্তু আমাদের পরামর্শ থাকবে যেন তোমরা সঠিক সাবজেক্ট চয়েজ করে পরিশ্রম করার মাধ্যমে এবং জানার মাধ্যমে তোমার সাফল্যে পৌছাও।
অন্যান্য সাব্জেক্টের মতো নৃবিজ্ঞান (অ্যানথ্রোপলজি) গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনী একটি বিষয়।
নৃবিজ্ঞান এর ইংরেজি প্রতিশব্দ অ্যানথ্রোপলজি। যদি আক্ষরিক অর্থে নৃবিজ্ঞান(অ্যানথ্রোপলজি) এর অর্থ বলতে হয়, তাহলে নৃবিজ্ঞান হলো মানুষ বিষয়ক বিজ্ঞান। অন্যান্য বিজ্ঞান যারা মানুষ নিয়ে কাজ করে, তাদের চেয়ে নৃবিজ্ঞান এর পরিধি ব্যাপকতর। পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা মানুষ নিয়ে নৃবিজ্ঞানে গবেষণা করে। বহু বছর ধরে মানুষের বিবর্তন নৃবিজ্ঞান গবেষণা করে। এছাড়া সাংস্কৃতিক বিকাশের গবেষণাও নৃবিজ্ঞানের আওতায়ভুক্ত। পৃথিবীতে বিভিন্ন জাত, বর্ণ ও মতের মানুষের বসবাস।
আরো পড়তে পারেন: মনোবিজ্ঞান সাবজেক্ট রিভিউ
এই মানুষ ও তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়বস্তু। নৃবিজ্ঞানীরা বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে ও পরে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের চেষ্টা করেন। বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সামাজিক রীতিনীতি বা সাংস্কৃতিক হতে পারে।
নৃবিজ্ঞানের (অ্যানথ্রোপলজি) বিভিন্ন শাখা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি শাখা দৈহিক নৃবিজ্ঞান। দৈহিক নৃবিজ্ঞান মানুষের শারীরিক বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া মানুষের আবির্ভাব ও পরবর্তীতে মানুষের শারীরিক বিবর্তন নিয়েও আলোচনা করা হয়।
নৃবিজ্ঞানের(অ্যানথ্রোপলজি) দ্বিতীয় অন্যতম প্রধান শাখা হচ্ছে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান এর পরিধি ব্যাপক। তাই সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানকে তিনটি উপশাখায় বিভক্ত করা যায়। যথা:
১. প্রত্নবিজ্ঞান
২.নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞান
৩.জ্যোতিবিজ্ঞান।
সকল উপশাখাই মানুষের সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে গবেষণা করে।
নৃবিজ্ঞান মানুষকে সহিষ্ণুতার শিক্ষা দয়। জাতিভেদে কেন লোক সাংস্কৃতিক, দৈহিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে আলাদা? নৃবিজ্ঞান তার ব্যাখ্যা দেয়, তবে বৈজ্ঞানিক ভাবে। মানুষ কি করে, কেন করে, কিভাবে করে, এর ফলাফল কি হতে পারে, এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে নৃবিজ্ঞান কাজ করে ও করছে। সমাজবিজ্ঞান সমাজের সকল সমস্যা-বিষয়, অর্থনীতি দেশের ব্যাবসা-বাণিজ্য নিয়ে গবেষণা করে, তেমনি নৃবিজ্ঞান মানুষ নিয়ে কাজ করে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নৃবিজ্ঞানীদের বিচরণ প্রয়োজন।
আরো পড়তে পারেন: কম্পিউটার সাইন্স সাবজেক্ট রিভিউ
নৃবিজ্ঞানে ক্যারিয়ার:
রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য নৃবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োজন, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারা যদি সামাজিক নৃবিজ্ঞান সম্পর্কে ভালো জানেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। অস্থিতিশীল হবে না। মনুষ্য জাতির মধ্যে জাতিভেদে, সাংস্কৃতিক, দৈহিক ইত্যাদি ভেদে পার্থক্যে আছে, কিন্তু নৃবিজ্ঞান একে-অপরকে চিনতে সাহায্য করে।
আমরা বিভিন্ন সাব্জক্টেকে বাজার দরে মূল্যায়ন করি। কিন্তু নৃবিজ্ঞানকে এভাবে মূল্যায়ন করলে হয় না। কারণ এটি মানব নিয়ে কাজ করে। রান্নাঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল বিষয় নিয়ে কাজ করে নৃবিজ্ঞানের। তাই উন্নত বিশ্বে নৃবিজ্ঞানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ের আছে নানান পেশা। এত জবের সুযোগ অন্যকোন বিভাগে নেই। মজার বিষয় হলো পেশাগগুলো যথেষ্ট উপভোগ্য।

যেসব ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞান(অ্যানথ্রোপলজি) উপযোগী:
১. প্রত্নতত্ত্ব
২. স্বাস্থ্য
৩. জাদুঘর
৪.প্রজেক্ট ডিজাইন
৫.জানস্বার্থে উন্নয়ন প্রজেক্ট
৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
৭. গণমাধ্যম
৮. সামাজিক সংস্থা
৯. উন্নয়ন সংস্থা
১০.পরিবেশ ও প্রতিবেশমূলক
১১. অপরাধ বিষয়ক
১২.ফরেন্সিক বিভাগ
১৩.বিমান শিল্প
১৪.গার্মেন্স শিল্প
১৫.মনোবিদ্যা
১৬.জৈবপ্রযুক্তি
১৭. রোগতত্ত্ব
বাংলাদেশের সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান(অ্যানথ্রোপলজি) বিভাগ রয়েছে। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগ চালু করে।
আরো পড়তে পারেন: গণিত সাবজেক্ট রিভিউ
ক্রমান্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়।
এছাড়া দেশের কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় চাকরিতে নৃবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়া হয়। যেমন:
- শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ
- স্বাস্থ্য সেবা
- পরিবার পরিকল্পনা
- মা ও শিশুর টিকাদান
- মাদকাসক্তি নিরাময়
- শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা
- নারী উন্নয়ন
- নারী নির্যাতন প্রতিরোধ
- ক্ষুদ্র ঋণ
- দারিদ্র্য বিমোচন
- গ্রামীণ উন্নয়ন
- নিরাপদ পানি
- ত্রাণ ও পুনর্বাসন
- শ্রম ও কর্মসংস্থান
- কৃষি উন্নয়ন
- সামাজিক বনায়ন
- পরিবেশ রক্ষা
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- মানবাধিকার
এসব খাতগুলোতে আপনি যে ধরনের কাজ করবেন:
- তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশ্নমালা প্রণয়ন
- তথ্য সংগ্রহ
- সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ
- গবেষণার ফলাফল তৈরি এবং উপস্থাপন
এছাড়া সরকারি চাকরিতে কোন সাবজেক্ট ফ্যাক্টর নয়। তাই আপনি নৃবিজ্ঞান বা অ্যানথ্রোপলজি সাবজেক্টে পড়ে যথেষ্ট সময় পাবেন, সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার জন্য।
নৃবিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষা:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিজ্ঞান বিষয়ক স্কলারশিপ দেওয়া হয়। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনাকে ওয়েবসাইট নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হবে। কখন স্কলারশিপ দেওয়া হয়, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। আপনি যে দেশে যেতে চান সেই দেশের ওয়েবসাইটে এগুলো পাবেন। এছাড়া স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় নিয়ে আমাদের এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
নৃবিজ্ঞান সাবজেক্ট রিভিউ বিষয়ক যদি আপনাদের কোন মতামত থেকে থাকে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান।
নৃবিজ্ঞান বিষয়ে বিসিএস এ শিক্ষা+প্রসাশন ক্যাডার আছে কি????