জ্যামিতি: আমরা সবাই কমবেশি সবাই জ্যামিতি শব্দের সাথে পরিচিত। জ্যামিতি সম্পর্কে আরও জানতে, আমরা আজ Geometry পরিচিতি সম্পর্কে আলোচনা করবো। জ্যামিতি কি, জ্যামিতি শব্দের অর্থ, জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক, জ্যামিতি বা Geometry কত প্রকার, ইউক্লিডের অবদান, জ্যামিতির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
জ্যামিতি শব্দের অর্থ কি( Geometry meaning in Bangla) ?
গ্রিক ভাষা হতে জ্যামিতি শব্দটি এসেছে। জ্যামিতি শব্দের অর্থ ভূমির পরিমাণ। যেখানে জ্যা অর্থ ভূমি ও মিতি অর্থ পরিমাণ।

জ্যামিতি এর ইংরেজি প্রতিশব্দ জিওমেট্রি। জিওমেট্রি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘জিও’ ও ‘মেট্রন’ হতে। জিও শব্দের অর্থ পৃথিবী এবং মেট্রন অর্থ পরিমাপ। ভূমি বা জমির পরিমাপ করতে গিয়েই সৃষ্টি হয় জ্যামিতি।
সুতরাং জ্যামিতি শব্দের অর্থ আমরা জেনে গেলাম। জ্যামিতি শব্দের অর্থ বিভিন্ন পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এসে থাকে।
জ্যামিতি কাকে বলে? (Geometry definition in Bangla)
যে শাস্ত্র পাঠ করলে ভূমির পরিমাপ প্ৰণালী, অবস্থান, আয়তন ও ক্ষেত্রফল ইত্যাদি সঠিকভাবে ও বিষদভাবে জানা যায় এবং পরিমাপ করা যায়, তাকে জ্যামিতি বা Geometry বলে।
আরও বিশদভাবে বলতে গেলে, গণিতের যে শাখা পরিমাপ প্ৰণালী, আকার, আকৃতি, অবস্থান, ক্ষেত্রফল, আয়তন এ সংক্রান্ত বিভিন্ন চিত্র বা নঁকশা সমূহের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বা আপেক্ষিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে তাকে জ্যামিতি বলে।
এখানে ত্রিমাত্রিক জগতকে বুঝানো হয়েছে। ত্রিমাত্রিক জগতের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
Read More: Noun চেনার উপায়
জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক কে?
জ্যামিতি শাস্ত্রের জনকঃ(Inventor of Geometry)
গ্রিক পন্ডিত ইউক্লিড জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক। তিনি মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। কিন্তু পরবর্ততে গ্রীক পন্ডিত থেলস ও পীথাগোরাস জ্যামিতি এর পূর্নতা দেন।
জ্যামিতি কত প্রকার? (Classification of geometry in Bangla)
ব্যবহারিক এর দিক হতে জ্যামিতি বা Geometry কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ব্যবহারিক জ্যামিতি
কারো কাছে জ্যামিতি সরল রেখার মতো সহজ আবার কারো কাছে বিশেষ এক ধরনের ভীতি।
২. তাত্তিক জ্যামিতি।
জ্যামিতির ইতিহাস(History of Geometry in Bangla):
এখন আমরা জ্যামিতির ইতিহাস থেকে কিছু তথ্য জানবো।
জ্যামিতির ইতিহাস বহু প্রাচীন। ধারণা করা হয় যিশুখ্রিস্টেরও জন্মের আগে জ্যামিতি এর উদ্ভব। যিশু খ্রিস্টের জন্মের বহু আগে মেসোপটেমিয়া ও ইজিপ্টে জ্যামিতির উদ্ভব। যদিও তারা জ্যামিতির বাস্তবিক তেমন কোনো ব্যবহার করতে পারেনি। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিক পন্ডিত মিলেতুসের থালেস প্রথম জ্যামিতির ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে সক্ষম হন। মিলেতুসের থালেস জ্যামিতি তত্ত্বের সাহায্যে পিরামিডের উচ্চতা বা সমুদ্রের তীর থেকে জাহাজের দূরত্ব বের করতে সক্ষম হন।
জ্যামিতির প্রথম ব্যবহারিক প্রয়োগ কে করেন?
উত্তর: মিলেতুসের থালেস প্রথম ব্যবহারিক প্রয়োগ করেন।
মিলেতুসের থালেসকে কিছু সরল উপপাদ্যের জনক হিসেবেও মনে করা হয়। এর পর জ্যামিতি আরো বেশি বিকাশ লাভ করে মিলেতুসের থালেসের ছাত্র পিথাগোরাসের হাত ধরে। পিথাগোরাস বেশ কিছু নতুন উপপাদ্য প্রমাণ করেন। পিথাগোরাসের সবচেয়ে বিখ্যাত উপপাদ্যটি হলো ”সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ ত্রিভুজটির অন্য দুই বাহুর বর্গের সমষ্টির সমান”।
জ্যামিতির অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন ইউক্লিড। বিভিন্ন গণিতবিদ জ্যামিতির বিভিন্ন তত্ত্ব এবং উপপাদ্য কে বিভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। এসব তত্ত্ব গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব তত্ত্ব ও উপপাদ্যকে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন ইউক্লিড। ইউক্লিড তার এই সমন্বিত গ্রন্থটির নাম দেন ‘দ্য এলিমেন্টস’ (C300 বিসিই) । এলিমেন্টস গ্রন্থটিতে ইউক্লিড যা লিখেছিল মানুষ এ সম্পর্কে আগে থেকে অনেক কিছুই জানতো। তবুও এই গ্রন্থটি কে জ্যামিতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। কারণ এটি সকল তত্ত্ব কে সমন্বয় করে। বিভিন্ন তত্ত্ব ও উপপাদ্যগুলো একে অপরের সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত, তা এলিমেন্টস গ্রন্থের মাধ্যমে প্রথম তুলে ধরেন ইউক্লিড। এছাড়া জ্যামিতির অগ্রগতিতে যাদের অবদান স্বীকার না করলেই নয় তারা হচ্ছেন, ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ রনে দেকার্ত, ফরাসি প্রকৌশলী জেরার দ্যজার্গ, গাসপার মোঁজ প্রমুখ।
স্থানাঙ্ক জ্যামিতি:
এখন আমরা স্থানাঙ্ক জ্যামিতি সম্পর্কে আলোকপাত করব। গণিতশাস্ত্রে স্থানাঙ্ক জ্যামিতি একটি অনন্য শাখা। স্থানাঙ্ক জ্যামিতি কে অনেক সময় বিশ্লেষণাত্মক জ্যামিতিক বলা হয়। মূলত স্থানাঙ্ক জ্যামিতি কার্টেসিয়ান জ্যামিতি নামে অধিক পরিচিত। স্থানাঙ্ক জ্যামিতি নামের শেষে জ্যামিতির নাম দেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি হচ্ছে জ্যামিতির একটি শাখা। যেখানে সমতলে একটি বিন্দুর অবস্থান একজোড়া সংখ্যার মাধ্যমে দেখানো হয়। এই সমতলে স্থান করা কোন একটি বিন্দুর স্থান জানতে একজোড়া অক্ষ ব্যবহার করতে হয়। একটি অক্ষকে আমরা x এবং অন্যকে y ধরি।
স্থানাঙ্ক জ্যামিতি নিচে উপাদান এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়:
x-অক্ষ এবং y-অক্ষ পরস্পরকে ছেদ করা বিন্দুর স্থানাঙ্ক (0, 0)
x-অক্ষের ডান দিকের মান ধনাত্মক এবং x-অক্ষের বাম দিকের মান ঋণাত্মক।
y-অক্ষ থেকে উপরে ধনাত্মক মান এবং y-অক্ষ থেকে নিচে ঋণাত্মক মান পাওয়া যায়।
x-অক্ষ এবং y-অক্ষ পরস্পরকে পরস্পর ছেদ করলে মোট চারটি বিন্দু পাওয়া যায়।
বিন্দু সমূহের মান (+, +), (-, +), (-, -), (+, -)।
ইউক্লিডকে কেন জ্যামিতির জনক বলা হয়?
ইউক্লিড মূলত তারা সময়কার এবং তার সময়ের পূর্বে যত উপপাদ্য এবং তত্ত্ব ছিল সবকিছু সমন্বয় করার চেষ্টা করেছে। তার ফলস্বরূপ তিনি রচনা করেছিলেন ‘দ্য এলিমেন্টস’ (C300 বিসিই)নামক একটি বই। এটি পরবর্তীতে খুবই জনপ্রিয়তা পায় এবং এটির জ্যামিতি এর অগ্রগতিতে খুব ভূমিকা রাখে।
ইউক্লিডের উপাদানসমূহ:
ইউক্লিড গাণিতিক জ্ঞানের বিস্তৃত ক্ষেত্র, জ্যামিতি, সংখ্যাতত্ত্বের উপরে প্রায় ১৩ টি বই লিখেছিলো। গ্রিকদের দ্বারা উদ্ভুত গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বইগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল।
Read More: জ্যামিতির সূত্র
ইউক্লিডের প্রভাব:
ইউক্লিড প্রভাবশালী ছিলেন। এর কারণ হচ্ছে তার অবদান জ্যামিতি বা গণিত ছাড়াও অনেক বেশি। তিনি যেভাবে যুক্তি ব্যবহার করত এবং প্রতিটি যুক্তির পক্ষে প্রমাণ দিয়েছিলেন, তা এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দার্শনিকদের ধারণাকে আকার দিয়েছে।
নিউটনের মত দার্শনিক এবং গণিতবিদরা ইউক্লিডের কাঠামো এবং যুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের রচনাগুলো উপস্থাপন করতেন। এমনকি আব্রাহাম লিংকন তার একজন ভক্ত ছিলেন এবং আব্রাহাম লিংকন মার্কিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ইউক্লিড এর অ্যাক্টিওমেটিক সিস্টেম ব্যবহার করেছিল।
এছাড়াও ইউক্লিড জ্যোতির্বিদ্যা, আয়না, দৃষ্টিভঙ্গি, অপটিকস ইত্যাদি সম্পর্কে ও রচনা লিখেছিলেন। যদিও সেগুলোর অনেক বর্তমানে হারিয়ে গেছে। মূলত এসব কারণেই ইউক্লিড কে জ্যামিতির জনক বলা হয়।
আজ আমরা আমাদের কলম এ পর্যন্ত রাখবো। আশা করি জ্যামিতি বা Geometry কি, জ্যামিতি শব্দের অর্থ, জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক, জ্যামিতি কত প্রকার, ইউক্লিডের অবদান, জ্যামিতি বা Geometry এরবৈশিষ্ট্য, জ্যামিতির সংজ্ঞা ইত্যাদি সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
আমাদের গনিতের আরও পোস্ট পেতে ভিজিট করুন এখানে।
আমাদের অন্যান্য পোস্ট পেতে ভিজিট করুন Learning View Bd.
1 thought on “জ্যামিতি কাকে বলে, জ্যামিতি অর্থ, জ্যামিতির জনক ও ইতিহাস”