ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়?ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল?

ইউটিউব থেকে ইনকাম: আজ আমরা কথা বলবো ইউটিউবে আয় সংক্রান্ত বিষয়ে। অর্থাৎ কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব। ইউটিউবে কত ভিউতে কত টাকা। ইউটিউবে কত ভিউতে কত টাকা দেয়। এছাড়াও ইউটিউব বিষয়ক নানা প্রশ্নের পরিষ্কার ধারণা এই পোস্ট এ আপনারা পেয়ে যাবেন। আসলে ইউটিউবে কত সাবস্ক্রাইভ কত টাকা, ইউটিউব প্রতি 1000 ভিউতে কত টাকা দেয়, ইউটিউব থেকে আয়, 1k  সমান কত টাকা, ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল, ইউটিউব মনিটাইজেশন ২০২১, বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব মনিটাইজেশন, ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন  ইত্যাদি প্রশ্নগুলো আমরা প্রায় করে থাকি।

আজ চেষ্টা করব এসব প্রশ্নের বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য। আশা করি পুরো পোস্টটি পড়লে ইউটিউব সংক্রান্ত আপনাদের যত প্রশ্ন আছে তার সবগুলো প্রশ্নের অ্যানসার পেয়ে যাবেন। এজন্য এই লেখাটি একটু বড় হবে।

ইউটিউব বর্তমানে এক আলাদিনের ম্যাজিকের মত। আপনি যা চান তা ইউটিউবে ভিডিও সহকারে পেয়ে যান। আপনি যে কোন কিছু সার্চ করলে কিছু না কিছু আপনার সামনে আসবে।’ অর্থাৎ ইউটিউব চ্যানেল আলাদিনের সেই দত্তের মতোই কাজ করছে। আমাদের যেকোন প্রয়োজনে আমরা প্রতিদিন একটু হলেও ইউটিউবে ঠু মেরে আসি।

কিভাবে ঘরে বসে মোবাইলে আয় করবো? অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে ২০২১

এখন আসি আপনাদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে তা হচ্ছে ইউটিউবে কত ভিউতে কত টাকা? সত্য কথা বলতে এর সঠিক জবাব আপনাকে ইউটিউব নিজেও দিতে পারবে না। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে ইউটিউব কিভাবে আপনাকে টাকা দিবে সে প্রক্রিয়াকে। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কি পরিমান ইনকাম হতে পারে। সুতরাং চলুন আমরা প্রথমে ধারণা নেই ইউটিউব কিভাবে আমাদের টাকা দেয়।

ইউটিউব ভিউ কি?

ধরুন আপনি একটি ভিডিও আপনার ইউটিউব চ্যানেলের আপলোড করেছেন। আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে ইউটিউবে বিভিন্ন কনটেন্ট দেখে থাকি। আপনি যে বিষয়ক ভিডিও আপলোড দিয়েছেন, যদি মানুষ তা দেখে থাকে তাহলে যে কয়বার দেখবে সেই কয়বার ভিউ হিসেবে কাউন্ট হবে। কিন্তু যদি একই ডিভাইস থেকে বার বার দেখা হয় তাহলে ইউটিউব সেটাকে স্প্যাম হিসেবে নিতে পারে। কারন অনেকেই প্রথম অবস্থায় নিজের ভিডিওতে বারবার নিজে দেখার মাধ্যমে ভিউ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। যা ইউটিউব মোটেই পছন্দ করে না।

ইউটিউব কিসের মাধ্যমে টাকা দেয়?

আমরা প্রশ্ন করে থাকি যদি আমার 1000 ভিউ হয়ে যায় তাহলে ইউটিউবে আমাকে কি পরিমান টাকা আয় হবে? কথা হচ্ছে ইউটিউব কি ভিউ এর মাধ্যমে টাকা প্রদান করে? মোটেই না। মূলত ইউটিউব আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন বা এড শো করাবে। এই বিজ্ঞাপন গুলো আপনার ভিউয়াররাদেখবে। এর মাধ্যমে আপনার ইউটিউব থেকে আয় হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম ভিউ এর মাধ্যমে মূলত ইনকাম হয় না। ইউটিউব থেকে ইনকাম হয় মূলত এডসেন্স বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। কিন্তু ওই বিজ্ঞাপনগুলো দেখবে আপনার ভিউয়ার। সুতরাং যদি আপনি ভিউ বাড়াতে পারেন তাহলে অটোমেটিক বিজ্ঞাপনগুলো বেশি বেশি দেখা হবে। তাই ইউটিউব থেকে আপনার ভালো পরিমাণ আয় হবে।

অনেকেই আছে যারা খুব অল্প ভিউতে যেমন 1000 ভিউতে 3 থেকে 4 $ ইউটিউব থেকে আয় করে নিচ্ছে। আবার অনেকেই 10000 ভিউতেও 2 ডলার আয় করতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব। এজন্য আমাদের আরো অনেক কিছু বুঝতে হবে।

ইউটিউবে এডসেন্স বা মনিটাইজেশন পেতে হলে কি করতে হবে?

ইউটিউব মনিটাইজেশন

ইউটিউব মনিটাইজেশন 2022:

আজ থেকে প্রায় কয়েক বছর আগে যে কোন চ্যানেলে মনিটাইজ পেতে কোন কষ্টই করতে হতো না। খুব সহজেই মনিটাইজ অন হয়ে যেত।

কিন্তু বর্তমানে মনিটাইজ পাওয়া হয়ে গেছে যেন সোনার হরিণ। বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ইউটিউব। আপনাকে মনিটাইজ পেতে হলে কষ্ট করতে হবে। ইউটিউব চায় যারা সত্যিকার অর্থে ইউটিউবকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিবে তাদেরকে মনিটাইজ দেওয়া হবে। এজন্য ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন এর শর্তগুলো আরও কঠিন হয়েছে। নিম্নে আমি সেই শর্ত গুলো আপনাদের জন্য দিচ্ছি।

আপনার ইউটিউব চ্যানেলের 1000 সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে এক বছরের মধ্যে।

এক বছরের মধ্যে 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম আপনার ভিডিও গুলোতে হতে হবে।

ইউটিউব গাইডলাইন ভঙ্গ করা কোনোভাবেই যাবেনা।

কপিরাইট থাকলে আপনি কোনোভাবেই ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পাবেন না।

এখন আমরা জানবো ইউটিউব মনিটাইজ কি?

ইউটিউব মনিটাইজ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনার চ্যানেলে থাকা ভিডিও গুলোতে ইউটিউব বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাবে। সে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার ইউটিউব থেকে আয় হবে। তাহলে ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য যে প্রক্রিয়া তা হচ্ছে মনিটাইজ।

বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব মনিটাইজেশন সম্ভব?

এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকে। উত্তর হচ্ছে সম্ভব হবে না কেন! আমি নিজেও দুই দিনের মধ্যে মনিটাইজ পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশের অনেক চ্যানেল ইউটিউব থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে মনিটাইজ এর মাধ্যমে। তাহলে আপনি কেন পারবেন না? শুধু প্রয়োজন ধৈর্য এবং কিছুটা টেকনিক। আশাকরি আপনার উত্তরটি পেয়ে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব মনিটাইজেশন সম্ভব।

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়:

প্রথমে যেমনটা বলেছিলাম ইউটিউব, ভিউয়ার এর উপরে আপনাকে অর্থ প্রদান করবে না। ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য মূলত বেশি বেশি বিজ্ঞাপন শো করাতে হবে। কিন্তু আপনার ভিডিওতে ভিউয়ার যত বেশি হবে, বিজ্ঞাপনগুলো ততবেশি দেখা হবে। এর ফলে আপনার আয় বেড়ে যাবে।

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়

ইউটিউব থেকে আয় বোঝার জন্য আমাদের যেসব বিষয় জানতে হবে তা হচ্ছে:

CPC,

CTR এবং

RPM

বিভিন্ন দেশে CPC এর পরিমান বিভিন্ন রকম। যেমন বাংলাদেশ থেকে যদি বেশি ভিজিটর আসে তাহলে 1000 ভিউয়ারে যদি প্রায় 300 থেকে 400 টি বিজ্ঞাপন শো হয় তাহলে আপনি 1 ডলার ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু বিভিন্ন উন্নত দেশ যেমন আমেরিকা, লন্ডন, রাশিয়া এইসব দেশের ভিউয়ার কম হলেও সেখান থেকে আয় বেশি হয়। অনেকেই আমেরিকা ভিত্তিক কাজ করে থাকে। তাদের 20 থেকে 30 টি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হলেই তিন থেকে চার ডলার আয় হয়ে থাকে।

অনলাইন জব করার সেরা ১৫ টি উপায় জেনে নিন-অনলাইন ইনকাম

গুগল এডসেন্স আমাদের কি হিসেবে টাকা দেয়?

গুগল এডসেন্স আমাদের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুলো খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করে সেগুলো হচ্ছে:

  • অ্যাড ভিউ (বিজ্ঞাপন দেখানো সংখ্যা)
  • CPC
  • CPM
  • Traffic Country
  • কিওয়ার্ড

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেই, আমি এখানে গুগল এডসেন্স এর কথা উল্লেখ করেছি এ কারণে, ইউটিউব যখন মনিটাইজ হবে তখন গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে আপনার টাকা উইথড্র করতে হবে। এছাড়া ইউটিউব গুগলের একটি প্রোডাক্ট।

Traffic Country:

প্রথমেই বলেছিলাম কিছু দেশ রয়েছে যেখান থেকে ভিউয়ার আসলে সিপিসি খুব বেশি পাওয়া যায়। এর ফলে আপনার আয় বেড়ে যায়। আবার কিছু কিওয়ার্ড রয়েছে যা খুব হাই সিপিসি যুক্ত কিওয়ার্ড। যেমন অনলাইন আয়, ইউটিউব থেকে আয় অর্থাৎ টেকনোলজি। এগুলোতে খুব ভালো সিপিসি পাওয়া যায়। কারণ এই কোম্পানিগুলো যখন গুগোল কিংবা ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিতে চায় তখন তাদের বেশি পরিমাণ টাকা গুগলকে দেওয়া লাগে। তাই গুগোল আমাদের বেশি পরিমাণ সিপিসি দিয়ে থাকে।

ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়? ফেসবুকে টাকা আয় করার 16 টি উপায়

ওয়েব ডিজাইন: কিভাবে ওয়েব ডিজাইনার হওয়া যায় সম্পূর্ণ গাইড লাইন

অ্যাড ভিউ (বিজ্ঞাপন দেখানো সংখ্যা):

ধরে নিলাম, আপনার একটি ভিডিওতে 100 ভিউ হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল ওই ভিডিওতে এড শো হয়েছে 20 বার অর্থাৎ 20 জনকে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়েছে বাকি 80 জনকে দেখানো হয়নি। এর ফলে আপনার ইউটিউব থেকে আয় কমে যাবে। এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে আমি কী করবো? আসলে এটি পুরোপুরি গুগল এডসেন্স এর উপর নির্ভর করে। কিন্তু কিছু বিষয় আছে সেগুলো যদি আপনি ইম্প্রুভ করতে পারেন তাহলে হয়তো এড শো হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সেগুলো হচ্ছে:

  • আপনার ভিডিও এর দৈর্ঘ্য বড় করেন। অনেকেই আছেন যারা দুই থেকে তিন মিনিটের ভিডিও তৈরী করে আপলোড করেন। এসব ভিডিও তে ইউটিউব বা গুগল এডসেন্স বেশি পরিমাণে বিজ্ঞাপন দেখায় না। আপনি চেষ্টা করবেন ৭ মিনিট কিংবা ৮ মিনিটের উপরে ভিডিও তৈরি করার। তাহলে সেখানে বেশি পরিমাণে বিজ্ঞাপন শো হবে।
  • আপনার ভিডিওতে যে ভিউয়ার রয়েছে তারা ভিডিওটি ভাল করে দেখছে কিনা! এরপরও বিজ্ঞাপন এর সংখ্যা নির্ভর করে।
  • সর্বোপরি আপনার ভিডিও কোয়ালিটি ভালো হলে বেশি পরিমাণে বিজ্ঞাপন হবে।

CPC:

মূলত Traffic Country এর মতই। কিছু কিছু দেশ রয়েছে যেসব দেশ থেকে ভিজিটর আসলে সিপিসি এর পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মান, লন্ডন ইত্যাদি দেশসমূহ থেকে ভিজিটর আনার। তাহলে সিপিসি বেড়ে যাবে। CPC এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Cost Per Click.  অনেকেই আছে যারা 1000 ভিউতে 4 থেকে 5 ৳ ইনকাম করে ইউটিউব থেকে। তাদের মূলত সিপিসি বেশি থাকে। আবার অনেকেই আছে যারা সিপিসি পায় ০.১ বা ০.২ । তাদের ইউটিউব থেকে ইনকাম কম হয়। তবে বাংলাদেশে এর ভালো ভালো বিভিন্ন কোম্পানি এখন গুগলে বিজ্ঞাপন দেয়। তাই বাংলাদেশ থেকেও সিপিসি এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে আমরা বুঝতে পারি, ইউটিউব প্রতি 1000 ভিউতে কত টাকা দেয়।

কিওয়ার্ড: কিছু কিওয়ার্ড রয়েছে যা হাই সিপিসি যুক্ত। যেমন টেকনোলজি। ভালো কিওয়ার্ড দিয়ে ভিডিও করলে মানুষ ওই কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে যখন আপনার ভিডিও দেখবে, তখন আপনার ভিডিওতে ভালো মানের বিজ্ঞাপন শো হবে। এর ফলে আপনার সিপিসি বেড়ে যাবে। ফলে ইউটিউব থেকে আয় বেড়ে যাবে। তাই ইউটিউবে আপনার ইনকাম বাড়ানোর জন্য ভালো কিওয়ার্ড যুক্ত ভিডিও করার বিকল্প নেই।

CPM:

এখন মূল জায়গায় চলে আসে অর্থাৎ আপনাদের সকলের প্রশ্নটা হচ্ছে ইউটিউব 1000 ভিউতে কত টাকা দেয়? এটা বোঝার জন্য আমাদের অবশ্যই CPM বুঝতে হবে। CPM এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Cost Per Mile. CPM মানে হচ্ছে আপনার ভিডিওতে প্রতি 1000 ভিউতে ইউটিউব বা গুগল এডসেন্স আপনাকে কত টাকা দিচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি 1000 ভিউতে আপনার ভিউয়ারদের যে বিজ্ঞাপন গুলো দেখানো হয় তার মাধ্যমে কি পরিমান আপনার হচ্ছে ইউটিউব থেকে আয় হয়। এটা মূলত CPM দ্বারা হিসাব করা সম্ভব।

CPM (Cost Per 1000 Views) অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। নিম্নে আমি সেগুলো উল্লেখ করছি:

  • আপনি যে ভিডিও তৈরি করছেন আপনার ভিউয়ার সেগুলো পুরোপুরি দেখছে কিনা! নাকি প্রথমে কিছু দেখেই আপনার ভিডিওটা আর দেখছে না! যদি পুরোপুরি না দেখে তাহলে আপনার ইউটিউব থেকে আয়ের পরিমাণ কত থাকবে। এজন্য ভালো মানের ভিডিও তৈরি করুন।
  • যখন বিজ্ঞাপন শো হয় তখন সে গুলোতে ক্লিক হচ্ছে কিনা।
  • আপনার ভিডিওতে সেই বিজ্ঞাপন গুলো দেখানো হচ্ছে সেগুলো মূল্য কেমন? যদি মূল্য বেশি হয় তাহলে আপনার ইউটিউব ইনকাম বেড়ে যাবে।
  • আপনার ভিডিওগুলো কোন দেশের মানুষ দেখছে!
  • এছাড়াও আরো কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যার উপরে সিপিএম নির্ভর করে।

আশা করি এই এই পর্যন্ত এসে আপনারা বুঝতে পারছেন ইউটিউব ভিউয়ার এর উপরে কোন অর্থ প্রদান করেনা। আপনাকে ইউটিউব থেকে ভালো পরিমাণ ইনকাম বা আয় করার জন্য অবশ্যই ভালো মানের ভিডিও তৈরি করতে হবে। সেই ভিডিওতে ইউটিউব ভালো মানের বিজ্ঞাপন শো করাবে। সেগুলো আপনার ভিউয়ার দেখবে এবং বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে। এর ফলে আপনার ইনকাম শুরু হবে। আর এর জন্য যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো আমি বলে দিয়েছি। এখন আমরা এরপরের ধাপে অর্থাৎ নতুন কিছু সম্পর্কে জানব।

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?

এমন প্রশ্ন আমাদের সকলের মধ্যে ঘুরপাক খায়। কারণ হচ্ছে একটা ভিডিও তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এরপর আমরা যদি মনিটাইজ পাই তাহলে একটি চ্যানেল থেকে কত টাকা আয় করতে পারবো? বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করার চ্যানেলগুলো হচ্ছে:

  • Ryan Kaji – 26 মিলিয়ন ডলার
  • Dude Perfect – 20 মিলিয়ন ডলার
  • Anastasia Radzinskaya – 18 মিলিয়ন ডলার
  • Rhett and Link – 17.5 মিলিয়ন ডলার
  • Jeffree Start – 17 মিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ থেকেও আপনি ভালো পরিমাণ ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। এজন্য আপনাকে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে যা আগেই বলা হয়েছে। যেমন আপনার ভিউয়ার গুলো যেন বাইরের কান্ট্রির যেমন আমেরিকা, জার্মানি, রাশিয়া এসব দেশ থেকে আসে। তাহলে দেখবেন অটোমেটিক আপনার আয় অনেকগুণ বেড়ে যাবে।

এখন অন্য কথা বলবো কিভাবে আমরা ইউটিউবে ইনকাম বাড়াতে পারি।

কন্টাক্ট রাইটিং টিপস

ইউটিউব থেকে আয় করার 5 টি উপায় সম্পর্কে এখন আমরা বলব।

ইউটিউব কত ভিউতে কত টাকা দেয়

বর্তমানে ভিডিও শেয়ারিং এর জন্য ইউটিউবের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতি মিনিটে প্রায় 500 ঘন্টার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হচ্ছে। আমরা এখানে এক বিলিয়ন ঘন্টার উপরে ভিডিও দেখছি। তাহলে বুঝতেই পারছেন ইউটিউব ভিডিও শেয়ারিং এর জন্য কতটা জনপ্রিয়। পুরো বিশ্বেই ইউটিউব খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই অনেকেই ইউটিউব কে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। অনেকেই ইউটিউব থেকে আয় করছেন। আপনাদের আয় কিভাবে আরো বাড়ানো যায়, এজন্য আমরা আপনাদের সাথে পাঁচটি উপায় শেয়ার করব।

ইউটিউব মনিটাইজেশন বা গুগল এডসেন্স থেকে আয়:

গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ইউটিউবে আয় হচ্ছে প্রাথমিক উপায়। সকলেই প্রথমে যখন ইউটিউব চ্যানেল খুলে, তখন এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করে থাকে। এডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে ইনকাম এর জন্য আপনাকে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। শুধুমাত্র ওদের নীতিমালাগুলো পূরণ করতে হবে।  এজন্য যে শর্তগুলো রয়েছে তা উপরে বর্ণিত করা হয়েছে। মূলত এক বছরের মধ্যে 1000 সাবস্ক্রাইবার এবং 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকলে আপনি মনিটাইজ এর জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। এরপর ইউটিউব অথরিটি আপনার চ্যানেল ভালো করে দেখবে। কোন সমস্যা আছে কিনা যেমন কপিরাইট ক্লেইম, নিম্নমানের ভিডিও সহ অনেক কিছুই তারা দেখবে। যদি তারা দেখে কোন সমস্যা নেই, তাহলে আপনাকে মনিটাইজ দিয়ে দিবে। এরপর আপনি আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনার আয় শুরু হবে। এটি হচ্ছে আপনার প্রাথমিক উপায়।

এফিলিয়েট এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে ইনকাম:

বর্তমানে ইউটিউবে অ্যাফিলিয়েটের মাধ্যমে ভালো পরিমাণ ইনকাম সম্ভব। যখন আপনার একটি চ্যানেল বড় হয়ে যায়, তখন আপনার অনেক সাবস্ক্রাইবার থাকবে। তখন যদি আপনি কোন কোম্পানির প্রচার করেন তাহলে সে কোম্পানি লাভবান হবে। এজন্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে বিভিন্ন ইউটিউবার চুক্তি সম্পন্ন করে থাকে। এর মাধ্যমে ভিডিও ডেসক্রিপশনে সেই কোম্পানির লিংক দিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ভিডিও এরমাঝে কোম্পানি সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনার রেফারেন্স এ যদি সেই কোম্পানির কোন প্রোডাক্ট সেল হয়, তাহলে সেখান থেকে কমিশন হিসেবে আপনি টাকা কামিয়ে নিতে পারেন। এটাই হচ্ছে এফিলিয়েট এর মাধ্যমে আয়। ফেসবুক, ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে যেমন অ্যাফিলিয়েটের মাধ্যমে আয় সম্ভব, তেমনি বর্তমানে ইউটিউব অ্যাফিলিয়েটের ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম।

পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে আয়:

যখন আপনার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর সাবস্ক্রাইবার থাকবে তখন আপনি একটা ব্রান্ডের হতে পারে আপনার নিজের, অথবা ইউটিউব চ্যানেলের লোগো ইত্যাদির মাধ্যমে তৈরিকৃত বিভিন্ন পণ্য আপনি সেল করতে পারেন। যেহেতু অনেক সাবস্ক্রাইবার অর্থাৎ সেখান থেকে ভালো পরিমাণ মানুষ আপনার প্রোডাক্ট কিনবে। এভাবে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে ইউটিউব থেকে আয় সম্ভব।

স্পন্সরশীপের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয়:

প্রথমেই আমাদের একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার অ্যাফিলিয়েট এবং স্পনসর্শিপ এক নয়। অনেকেই স্পনসর্শিপ ও অ্যাফিলিয়েট গুলিয়ে ফেলে। এফিলিয়েট হচ্ছে আপনি কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল করে দিচ্ছেন। আর স্পনসর্শিপ হচ্ছে আপনি কোন কোম্পানির প্রচার করছেন। যেমন আপনি কোন কোম্পানি থেকে স্পন্সরশীপ নিলেন এবং এর মাধ্যমে আপনি সেই কোম্পানির কথা আপনার ভিডিও এর মাঝে বললেন। এজন্য কোম্পানির প্রচার এবং প্রসার হচ্ছে। এর ফলে কোম্পানি আপনাকে টাকা দিবে। এভাবে আমরা স্পন্সরশীপের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে পারি।

বিভিন্ন কোর্স অফার করে ইউটিউব থেকে ইনকাম:

আমরা আমাদের ভিডিওর মাঝে বিভিন্ন কোর্স সাবস্ক্রাইবারদের জন্য অফার করতে পারি। হতে পারে শিক্ষামূলক। যেমন আপনি একজন শিক্ষক, হতে পারে আপনি আইটি খুব ভালো পারেন, আপনি আইটি বিষয়ক কোর্স অফার করতে পারেন। এভাবে আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়ে বিভিন্ন কোর্স অফার করতে পারেন। যদি সত্যিই আপনি ভাল বুজান এবং আপনার সাবস্ক্রাইবার বুঝতে পারে তাহলে তারা অবশ্যই আপনার থেকে কিনবে। এর মাধ্যমে অনেক ভালো পরিমাণ টাকা অনলাইনের মাধ্যমে ইউটিউবে আয় সম্ভব।

ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল নাকি হারাম? অথবা  এডসেন্স থেকে আয় হালাল নাকি হারাম?

ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল

মূলত ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। অনেকেই মনে করেন এটি ইউটিউব থেকে আয় হালাল। আবার অনেকেই মনে করেন ইউটিউব থেকে আয় হারাম। হারাম মনে করার কারণ হচ্ছে আপনি যে ভিডিও থেকে আয় করছেন সেই ভিডিওতে কিছু খারাপ বিজ্ঞাপন শো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর মাধ্যমে যখন আয় হবে তখন হারাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকেই এভাবে বলেন যদি আপনার একটি টিভি চ্যানেল থাকতো, তাহলে সেখানে অনেক কোম্পানিই বিজ্ঞাপন শো করাতো। সে ক্ষেত্রে সেটা যদি হালাল হয় তাহলে এডসেন্স থেকে আয় হালাল। কিন্তু আসলে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে হয়তো এর উত্তর সঠিক দেয়া যাবে না। এজন্য আপনারা ভালো কোন হুজুরের কাছ থেকে জানার অনুরোধ করছি। কোনোভাবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাদের থেকে পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ। যদি আমি এখানে বলে দেই ইউটিউব থেকে আয় হালাল, তাহলে যদি আসলে হালাল না হয় তাহলে আমার গুনাহ এর পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাই আপনারা দয়া করে বিজ্ঞ কারো কাছ থেকে জেনে নিবেন।

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বাড়াবো?

ভিডিও গুলো যেন হয় মানসম্মত:

বর্তমানে ইউটিউবে প্রচুর পরিমাণে ভিডিও রয়েছে। এমন কোন ক্যাটাগরি পাবেন না যা ইউটিউব এ নেই। তাহলে এত এত ভিডিও এর মাঝে আপনার ভিডিও মানুষ কেন দেখবে? তখনই দেখবে যখন ভিডিও কোয়ালিটি খুব ভালো হবে। তাই ইউটিউব এ ভালো মানের ভিডিও তৈরী করে আপলোড করুন। তাহলে আপনার ভিউয়ার বাড়বে, সাথে সাবস্ক্রাইবার বাড়বে এবং ইউটিউব আয় বাড়বে। যখন আপনার ভিডিওগুলো মানসম্মত হবে তখন অটোমেটিক ভিউয়ার আপনার চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করবে। কারণ তারা চায় ভালো কিছু পেতে। যদি আপনি শিক্ষামূলক ভিডিও বানান তাহলে যদি আপনার ভিডিওগুলো শিক্ষামূলক হয় তাহলে তারা সাবস্ক্রাইবার করবে। এভাবে আপনি চেষ্টা করবেন ভালো মানের ভিডিও তৈরি করার।

ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো

মানুষ ইউটিউবে কি সার্চ করছে?

প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনি যে ভিডিও গুলো বানাচ্ছেন সেগুলো লোকজন দেখছে কিনা! অর্থাৎ ভিউয়াররা কি ধরনের ভিডিও দেখতে চায় আপনাকে প্রথমে সেটা বুঝতে হবে। এরপর সেই অনুযায়ী আপনাকে ভিডিও তৈরি করতে হবে। এজন্য আপনি কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। তারমধ্যে হচ্ছে কিছু টুলস যার মাধ্যমে ইউটিউবে ট্রেন্ডিং সার্চিং রেজাল্টগুলো আপনি খুব সহজেই দেখতে পারবেন। এছাড়াও আপনি যখন ভিডিও তৈরি করবেন সেই রিলেটেড কিওয়ার্ড দিয়ে ইউটিউব সার্চ বক্সে সার্চ করার সময় দেখবেন ওই রিলেটেড কিছু কিওয়ার্ড আপনাকে সাজেশন এ দেখাবে। সেগুলো নিয়ে আপনি ডেসক্রিপশন লিখতে পারেন। তাহলে এটি আপনার এসইওতে কাজ করবে।

নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিডিও আপলোড করুন:

আমি ধরে নিচ্ছি আপনি ইউটিউবে টেকনোলজি অথবা এডুকেশনাল ভিডিও প্রকাশ করেন। কিন্তু দেখা গেল আপনি একটি ভিডিও শেয়ার করলেন আজ। একটি ভিডিও দেওয়ার পর 5 দিন পর আরেকটি দিচ্ছেন। এরপর একদিন পর আবার আরেকটি। তাহলে আপনার ভিউয়ার যারা রয়েছে তারা কনফিউশন হয়ে যাবে, কখন আপনি ভিডিও আপলোড দিবেন! নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিডিও আপলোড করলে এতে আপনার ভিউয়ার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সাবস্ক্রাইভ সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।

ইউটিউব গিভওয়ে:

অর্থাৎ আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার এর মাধ্যমে গিভওয়ে দিতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি ভালো সংখ্যক ভিউ এবং সাবস্ক্রাইব পেতে পারবেন। অনলাইন প্রতিযোগিতার জন্য আপনি যেসব বিষয় খেয়াল করতে পারেন:

প্রতিযোগিতার জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা

আপনার গিভওয়ে মার্কেটিং করুন

ইউটিউব ফিচার ব্যবহার করুন

প্রতিযোগিতার নিয়ম কানুন বর্ণনা করুন

শেষ কথা,

এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। এর পরেও কিছু প্রশ্ন হয়তো থেকে যাবে। সেগুলো আপনারা কমেন্টে জানান। আমি চেষ্টা করেছি ইউটিউবে কত সাবস্ক্রাইভ কত টাকা, ইউটিউব প্রতি 1000 ভিউতে কত টাকা দেয়, ইউটিউব থেকে আয়, 1k  সমান কত টাকা, ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল, ইউটিউব মনিটাইজেশন ২০২১, বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব মনিটাইজেশন, ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন  ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। আপনাদের মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

This video will help you.