আয়নীকরণ শক্তির আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা আয়নিকরণ শক্তির ক্রম, আয়নিকরণ শক্তির মান, কোন মৌলের আয়নীকরণ শক্তির মান বেশি, অক্সিজেনের আয়নীকরণ শক্তির মান কত, আয়নিকরণ শক্তিকে কি দ্বারা প্রকাশ করা হয়, আয়নিকরণ শক্তি কাকে বলে ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আয়নিকরণ শক্তি কাকে বলে?
আয়নিকরণ শক্তি: আয়নিকরণ শক্তি বা আয়নিকরণ বিভব হচ্ছে গ্যাসীয় অবস্থায় কোন একটি মৌলের এক মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করার জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে আয়নিকরণ শক্তি বলা হয়।
X + শক্তি → X+ + e-
অর্থাৎ কোন একটি মৌলের শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন অপসারণ করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন হবে, তা আয়নীকরণ শক্তি। যদি ইলেকট্রন অপসারণ করতে শক্তি বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সেই মৌলের আয়নীকরণ শক্তি এর মান বেশি হবে। অপরদিকে যদি শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন অপসারণ করতে কম শক্তির প্রয়োজন হয় তাহলে তার আয়নীকরণ শক্তির মান কম হবে।

আয়নিকরণ শক্তি আমরা আরও সহজভাবে বুঝতে পারি। যেমন, আপনি ইস্কুলের প্রথম বেঞ্চে বসেন। একটি বেঞ্চে তিনজন ছাত্র হতে বসতে। কিন্তু আপনি একদিন স্কুলে যেয়ে দেখলেন 3 জন ছাত্র অলরেডি বেঞ্চে বসা। তাহলে আপনি কি করবেন ?আপনাকে একজনকে বেঞ্চ থেকে সরাতে হবে। অবশ্যই যে শেষে বসেছে আপনি তাকে সরিয়ে দিবেন। এই সরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনার কিছু শক্তি খরচ হবে। যে পরিমাণ বল বা শক্তি খরচ হবে তা হবে আপনার আয়নিকরণ শক্তি। তাহলে কোন মৌল থেকে তার শেষ কক্ষপথ থেকে কোন ইলেকট্রন সরিয়ে নিতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন হবে, তা হচ্ছে আয়নিকরণ শক্তি। তাহলে এবার আপনি বলুন আয়নিকরণ শক্তি কাকে বলে?
সুতরাং আয়নিকরণ শক্তি কাকে বলে এ নিয়ে আপনাদের প্রশ্ন এর উত্তর আশা করি পেয়ে গেছেন।
Read More:
তড়িৎ ঋণাত্মকতা একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম -তড়িৎ ঋণাত্মকতা এর বিস্তারিত
পর্যায় সারণি- পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল সহ বিস্তারিত
ssc chemistry guide pdf | নবম-দশম শ্রেনীর রসায়নবিজ্ঞান গাইড
আয়নিকরণ শক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম এর ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হল:
যে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বা পারমাণবিক আকার কম সেই মৌলের নিউক্লিয়াস কর্তৃক সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকটনের আকর্ষণ বেশি হয়। অর্থাৎ ইলেকট্রন কে নিউক্লিয়াস বেশি শক্তিতে আকর্ষণ করতে পারে। এর ফলে সেই মৌল থেকে ইলেকট্রন টি অপসারণ করতে শক্তি বেশি লাগবে। এর ফলে সেই মৌলের আয়নীকরণ শক্তি এর মান বেড়ে যায়। অপরপক্ষে যে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি, সেই মৌলের নিউক্লিয়াস কর্তৃক সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন এর আকর্ষণ কম হয়। তাই সেই মৌলের সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন অপসারণ করতে শক্তি কম লাগবে।
সুতরাং সেই মৌলের আয়নীকরণ শক্তি এর মান কম হয়। আমরা জানি, একটি পর্যায়ের বাম থেকে ডান দিকে গেলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হ্রাস পায়। তাহলে বাম থেকে ডান দিকে গেলে আয়নীকরণ শক্তি মান বৃদ্ধি পাবে। আবার একটি গ্রুপের উপর থেকে নিচে আসলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং একই গ্রুপের উপর থেকে নিচের মৌলের আয়নীকরণ শক্তি মান কম হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি আয়নীকরণ শক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম।
আয়নীকরণ শক্তির মান:
অক্সিজেনের আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: অক্সিজেনের আয়নিকরণ শক্তি 1314.
Be এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 900.
সোডিয়াম এর প্রথম আয়নীকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: সোডিয়াম এর প্রথম আয়নীকরণ শক্তি 496.
Mg এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: Mg এর আয়নিকরণ শক্তি
Li এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 520
K এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 418
Na এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 496
C এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 1086
B এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 800
N এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 1403
O এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 1314
F এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 1680
Ne এর আয়নিকরণ শক্তির মান কত?
উত্তর: 2080
আয়নিকরণ শক্তি কে কি দ্বারা প্রকাশ করা হয়?
আমরা আয়নীকরণ শক্তির বিভিন্ন মৌলের মান জেনে গেলাম। কিন্তু আয়নীকরণ শক্তির একক অর্থাৎ আয়নীকরণ শক্তিকে কি দ্বারা প্রকাশ করা হয় তা না জানলে উত্তর ভুল হতে পারে।
আয়নিকরণ শক্তিকে কি দ্বারা প্রকাশ করা হয়?
উত্তর: আয়নিকরণ শক্তিকে kj mol^-1 দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আয়নিকরণ শক্তির ক্রম:
এক নম্বর গ্রুপের আয়নিকরণ শক্তির ক্রম:
মেীল | Li | Na | K | Rb | Cs |
আয়নিকরণ শক্তি | 520 | 496 | 418 | 403 | 376 |
দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলের আয়নিকরণ শক্তির ক্রম:
মেীল | Li | Be | B | C | N | O | F | Ne |
আয়নিকরণ শক্তি | 520 | 900 | 800 | 1086 | 1403 | 1314 | 1680 | 2080 |
আয়নিকরণ শক্তির ক্রম ব্যাখ্যা:
আমরা আগেই বলেছি, একই পর্যায়ের বাম দিক থেকে ডান দিকে গেলে মৌলসমূহের পারমাণবিক আকার বা ব্যাসার্ধ কমে যায়। ফলে সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রন এর নিউক্লিয়াস কর্তৃ ক আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তাই আয়নিকরণ শক্তি বাড়বে। দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলের আয়নিকরণ শক্তি দেখলে বুঝতে পারি, সর্ববামে অবস্থিত লিথিয়াম এর আয়নীকরণ শক্তি 520. এরপর যতই ডান দিকে যাওয়া যাচ্ছে ততই আয়নিকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১ম আয়নিকরণ শক্তি
X → X+ + e−
২য় আয়নিকরণ শক্তি
X+ → X2+ + e−
৩য় আয়নিকরণ শক্তি
X2+ → X3+ + e−
আবার, একটি গ্রুপের উপর থেকে নিচে গেলে মৌলসমূহের পারমাণবিক আকার বা ব্যাসার্ধ বেড়ে যায়। ফলে সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রন এর নিউক্লিয়াস কর্তৃ ক আকর্ষণ হ্রাস পায়। তাই আয়নিকরণ শক্তি কমবে। এক নম্বর গ্রুপের মৌলের আয়নিকরণ শক্তি দেখলে বুঝতে পারি, সবচেয়ে উপরে অবস্থিত লিথিয়াম এর আয়নীকরণ শক্তি 520. এরপর যতই নিচের দিকে যাওয়া যাচ্ছে ততই আয়নিকরণ শক্তির মান হ্রাস পাচ্ছে।
সুতরাং, আমরা আয়নিকরণ শক্তির ক্রম ব্যাখ্যা বুঝতে পারলাম। অর্থাৎ আয়নীকরণ শক্তির ক্রম থেকে বোঝা যায়, একই পর্যায়ের বাম থেকে ডান দিকে গেলে আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে একই গ্রুপের উপর থেকে নিচে আসলে আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস পাবে।
তাহলে আয়নিকরণ শক্তি এই পোস্ট হতে আমরা কি কি জানলাম চলুন এক নজরে দেখে নিন:
আয়নীকরণ কি?
আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে?
আয়নিকরণ শক্তির মান
অক্সিজেনের আয়নীকরণ শক্তির মান কত?
আয়নিকরণ শক্তিকে কি দ্বারা প্রকাশ করা হয়?
তাহলে বলুনতো নিজের কোন মৌলের আয়নীকরণ শক্তির মান বেশি?
- Na
- Li
- O
- F
আশা করি, আয়নিকরণ শক্তি সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের অবসান হয়েছে। যদি আপনাদের এর বাইরে কোন প্রশ্ন জানার থাকে তাহলে আমাদের জানান, আমরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
You May Like:
1 thought on “আয়নিকরণ শক্তি সবকিছু ক্লিয়ার-আয়নীকরণ শক্তির মান ও ক্রম”